October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 21st, 2023, 9:59 pm

জনবল সঙ্কটের অজুহাতে কমানো হচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু সিন্ডিকেটের তৎপরতায় সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, তখন জনবল সঙ্কটের অজুহাতে বাজার মনিটরিং কমানো হচ্ছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের আওতা সংকুচিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও। গত বছর যেখানে ৭৫৯ বাজার পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়। এবার তা কমিয়ে ২৫০তে নামানো হয়েছে। পয়লা জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। ফলে বাজারে আরো সক্রিয় হচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্যে সিন্ডিকেট থাবা বসাতে শুরু করেছে। হু হু করে নিত্যপণ্যের দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির উত্তাল বাতাস বইছে। সর্বত্রই সিন্ডিকেটের থাবা। সব জায়গা থেকে পণ্যমূল্য ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরো জোরদারের সুপারিশ আসছে। তখন লোকবল অভাব দেখিয়ে উলটোপথে হাঁটছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। বাজার মনিটরিং কার্যক্রম ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৯টি অতিনিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেঁধে দেয়ার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্ম-পরিকল্পনার মনিটরিং কর্মসূচির আওতায় সারা বছর নিত্যপণ্যের বাজার পরিদর্শনের সংখ্যা ৭৫৯টি থেকে কমিয়ে ২৫০টি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে আগের অর্থবছরের তুলনায় পরিদর্শনের সংখ্যা কমছে ৫০৯টি। আর জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর গত অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৫টি বাজার তদারকি করলেও চলতি অর্থবছরে তা ১০ হাজারে নামিয়ে আনা হয়।

অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বাজার পরিদর্শন কমবে এক হাজার ৭৮৫টি। ইতোমধ্যে এই পরিকল্পনা নিয়ে মাঠ কাজ শুরু করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিগত ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৯২৩টি বাজারে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় ৫২ হাজার ৩৯০টি অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু এতোগুলো অভিযান পরিচালনার পরও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হচ্ছে। সেখানে এই তদারকি কমিয়ে দেওয়া হলে বাজারে সিন্ডিকেট আরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে কমেনি বরং কিছু পণ্যে দাম উলটো বেড়েছে। ডলার সংকট, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম ওঠানামা, জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক সংকট প্রভাবের কথা বলে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে।

তবে এ ধরনের প্রভাবে যতোটা মূল্য বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে সিন্ডিকেটের থাবায়। শুধু এক ডিমের বাজার ঘিরে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর বাজারে অভিযান চালিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। শুধু ডিম নয়, সবজি, মাছ, মাংস, চিনি, ভোজ্যতেলসহ অধিক প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের বাজারে এক ধরনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) গত ৪ আগস্টের ফোরকাষ্টে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম গড়ে দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। পনের দিনের ব্যবধানে প্রতিটন চিনির দাম গড়ে ১০ ডলার কমেছে। বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের গড় মূল্য কমতে শুরু করলেও এর প্রভাব তেমন বাজারে পড়ছে না। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্ম-পরিকল্পনার মধ্যে চলতি অর্থবছরে কয়েকটি চ্যালেঞ্জকে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল, আমদানি করা নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলা এবং সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখা।

২০২২ সালের ৩০ আগস্ট সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত বৈঠকে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে দেশের অতিপ্রয়োজনীয় নয়টি পণ্যের দাম নির্ধারণের ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। নির্ধারিত ওই নয়টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ডিম, রড ও সিমেন্ট। গমের মধ্যে আটা ও ময়দা, ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েল ও সয়াবিন দুই ধরনের পণ্যই রয়েছে। তবে ওই ঘোষণা বাস্তবায়নে এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, বাজার মনিটরিং দরকার আছে। মনিটরিংয়ের জন্য সরকার জনবল ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন জানান, প্রতিদিন বাজার পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করতে জনবল প্রয়োজন। সেটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে গেলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অন্য কোনো কাজ করতে পারবে না। যে কারণে এই মনিটরিং কার্যক্রম কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের বাইরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থা মনিটরিং কাজটি করছে। ওসব সংস্থা সঠিকভাবে করছে কিনা তা কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।