নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারা দেশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজ হচ্ছে ওয়াসার বাইরে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা। সেজন্য বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডার গঠন করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্ব ও পদে পিছিয়ে পড়ছে ক্যাডার কর্মকর্তারা। বরং সিনিয়র হয়ে পড়েছে নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে ব্যাহত হচ্ছে সংস্থাটির কার্যক্রম। আটকে আছে নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নও। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৫ জন ক্যাডার কর্মকর্তা আর নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ৯০ জন রয়েছে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা গত ১৫ জুন ক্যাডারভুক্ত হয়েছে। ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপনে তাদের প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আসার দিন থেকে (২০০৪-২০০৬) জ্যেষ্ঠতা দেয়ায় ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের জুনিয়র (কনিষ্ঠ) হয়ে গেছে। ফলে ক্যাডার কর্মকর্তারা দায়িত্ব ও পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। আর নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন জটিলতার কারণে সহকারী প্রকৌশলীর শতাধিক পদ শূন্য থাকার পরও ৩২তম বিসিএসের পর কোনো নিয়োগ হয়নি। গত ৮টি বিসিএসের নিয়োগের জন্য কোনো চাহিদাও দেয়া হয়নি। তবে ৪১তম বিসিএসে ৩৬ জন নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর ৭৬টি পদের সবকটি এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর ১৪টি পদের মধ্যে ১০টি শূন্য রয়েছে। সহকারী প্রকৌশলীরা ওসব পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছে। আর শূন্য হয়ে আছে সহকারী প্রকৌশলীর শতাধিক পদ। ফলে টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি-৬) অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মূলত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের লেজে-গোবরে অবস্থার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল (বিসিএস) ক্যাডারের ২৫ জন কর্মকর্তা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আসা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের চাপে তাদের পদোন্নতি হয়নি। নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রভাবের কারণে আটকে আছে বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রমও। ফলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। অথচ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ক্যাডার বিভাগ। কিন্তুনন-ক্যাডার কর্মকর্তারা দখলে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদগুলো। ২৮, ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারের ২৫ জন কর্মকর্তা যোগদান করে। কিন্তু তাঁদের কোনো পদোন্নতি হয়নি। তারা শুরু থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদেই কাজ করছে। এমনকি সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় ৫ বছর আগে পাস করার পরও বেশির ভাগ কর্মকর্তার সিনিয়র স্কেলের বেতনও হয়নি। পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতার তালিকাও করা হয়নি। অথচ তাঁরা প্রত্যেকেই সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী উত্তীর্ণ কর্মকর্তারা ৯ম থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পাওয়ার কথা থাকলেও ৫ বছরেও তাঁরা পদোন্নতি পায়নি। ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ষষ্ঠ গ্রেডেই আটকে আছে। অথচ ইতোমধ্যে তারা পঞ্চম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করলেও নির্বাহী প্রকৌশলী পদে তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বর্তমানে নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮৪ জন চাকরিতে রয়েছে। তাদের সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে সরাসরি নির্বাহী প্রকৌশলী (গ্রেড-৫) পদে পদোন্নতি দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। অথচ নন-ক্যাডার থেকে আসা কর্মকর্তারা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আসেনি। তাদের ৬ মাসের বনিয়াদি প্রশিক্ষণ নেই। কোনো বিভাগীয় ও সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা দেঢনি। ক্যাডারে তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতার তালিকাও নেই। এ অবস্থায় তাদের পদোন্নতির তোড়জোড় নিয়ে ক্যাডার কর্মকর্তারা অসন্তুষ্ট। ইতোমধ্যে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। আর উচ্চ আদালত ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন। তাছাড়া ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপন সংশোধনের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি পাঠায়।
এদিকে গত মে মাসে প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আসা নন-ক্যাডার ৯০ কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত সহকারী প্রকৌশলী করা হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ১৫ জুন তাদের রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ক্যাডারভুক্ত করে আদেশ জারি করেছে। তাতে ৩০ জন কর্মকর্তার বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারভুক্তির তারিখ ধরা হয়েছে ২০০৪ ও ২০০৬ সাল। ২০০৭ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীসহ ১২ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (বিসিএস ক্যাডার) অধিদপ্তরে যোগ দেন। তাদের মধ্যে দুজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও ৪ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে কর্মরত আছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের ১৫ জুনের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা এখন নন-ক্যাডার থেকে আসা সহকারী প্রকৌশলীদের জুনিয়র হয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী গ্রেড-১ পদের কর্মকর্তা। আর নন-ক্যাডার থেকে আসা সহকারী প্রকৌশলীরা নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদ একটি, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ ৩টি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পদ ১৪টি, নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ ৭৬টি। অধিদপ্তরে এখন ৪২টি প্রকল্প চলমান আছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাডার-নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। মামলাও চলছে। এখন উভয় পক্ষের সম্মতিতে সমাধান করা হচ্ছে। তবে একদিনে সব সমস্যা সমাধান হবে না। উভয় পক্ষ যেন ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারে সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ