আপডেটেড
জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার জেলা সদর ও বড়লেখায় জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনকারীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। সংশোধিত এনআইডি কার্ডের সব তথ্য সঠিক থাকলেও জন্মস্থান হয়ে গেছে ‘ভেনেজুয়েলা’! এতে বিভিন্ন প্রয়োজনে এনআইডি সংশোধনকারীরা পড়েছেন মারাত্মক দুর্ভোগে। গত এক সপ্তাহ ধরে নির্বাচন কমিশনের সার্ভার থেকে ডাউনলোড করা কার্ডে জন্মস্থান ‘ভেনেজুয়েলা’ লিখা আসছে। দীর্ঘ নানা ঝুট ঝামেলা শেষে যখন এনআইডি কার্ড হাতে আসলো তখনই শুরু হলো অন্য এক বিড়ম্বনা। জরুরি প্রয়োজনে নিজেদের সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে এখন চরম দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মৌলভীবাজার জেলার সদর ও বড়লেখা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা। গেল প্রায় ৮-১০ দিন থেকে স্থানীয় দুটি নির্বাচন কমিশন অফিসের উপকারভোগীরা এমন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সংশোধনের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর প্রাপ্ত ওই এনআইডি কার্ড কোনো কাজে না এসে উল্টো দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
এ নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকেও। সংশোধিত এনআইডি কার্ডের সব তথ্য সঠিক থাকলেও জন্মস্থানের দেওয়া হয়েছে ‘ভেনেজুয়েলা’। এমন এনআইডি কার্ডে উপকারভোগীদের চোখ ছানাবড়া। কি করবেন তা ভেবে তারা দিশেহারা। ছোট ভুল সংশোধন করতে গিয়ে এখন জন্মস্থানই হয়ে গেছে অন্যদেশ। প্রথমে এক দুজনের এমন সমস্যায় তেমন গুরুত্ব না দিলেও এখন সবারই কার্ডে একই অবস্থা। এনআইডি কার্ড নিয়ে দুর্ভোগে পড়া স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জরুরি প্রয়োজনে ছোট ভুল সংশোধন করতে গিয়ে এখন বড় ভুল তাদেরকে পেয়ে বসছে।
এই অযাচিত ভুল তাদেরকে চরম হয়রানিতে ফেলেছে।
তারা জানান, গেল প্রায় ৮-১০ দিন ধরে নির্বাচন কমিশনের সার্ভার থেকে এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করলেই কাডের্র জন্মস্থান অংশে ‘ভেনেজুয়েলা’ লিখা আসছে। দুর্ভোগ্রস্তরা জানান একাডেমিক সনদ, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন কিংবা পিতা-মাতার কাগজপত্রের সঙ্গে তথ্যগত অমিলের কারণে অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করেন। দিনের পর দিন ধরনা দিয়ে অনেক ভোগান্তি ও হয়রানির পর সংশোধন সম্পন্ন হওয়ার বার্তা পেয়ে নির্বাচন কমিশনের সার্ভার থেকে এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করে বিপাকে পড়ছেন। মৌলভীবাজার সদর ও বড়লেখা উপজেলার কম্পিউটার প্রিন্টারের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, গেল প্রায় ৮-১০ দিন থেকে যারাই তাদের সংশোধনকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করছেন সকলেরই কার্ডের জন্মস্থান ভেনেজুয়েলা লেখা আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস নির্বাচন অফিসে ধরনা দিয়ে, বাড়তি উৎকোচ ও নানা বিড়ম্বনার পর যখন সার্ভার থেকে ডাউনলোড দিয়ে কার্ড হাতে পেয়েছেন তখন থেকে চরম ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এই কার্ড কাজের জন্য কোথাও দেয়া যাচ্ছে না। কারণ কার্ড বলছে আমরা ভেনেজুয়েলার নাগরিক। বড়লেখা উপজেলার তালিমপুরের রোমানা বেগমের ভাই জানান, তার বোন ও ভাগনার নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। দীর্ঘদিন শেষে যখন এনআইডি কার্ডটি সার্ভার থেকে ডাউনলোড করেছেন তখন থেকেই বাড়তি বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একই দুর্ভোগে পড়েছেন ওই উপজেলার সুজানগর সালদিঘার রিংকু চন্দ্র দাসসহ অনেকেই।
পৌরশহরের শিউলি বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি সংশোধনের জন্য সব ডকুমেন্ট দিয়ে আবেদন জমা দিয়েও বারবার নির্বাচন অফিসে ধরনা দিয়েছেন। যখন সংশোধনের ম্যাসেজ এনআইডি ডাউনলোড করেন তখন দেখতে পান তিনি ভেনেজুয়েলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। এই কার্ড নিয়ে বড় সমস্যায় পড়ার আশংকায় তিনি তা এখন ব্যবহার করছেন না। বর্নি ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভোক্তভোগী বলেন, প্রায় ২ মাস আগে সংশোধনের আবেদন করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে বারবার ধরনা দিয়েছেন। অনেক দূর থেকে অফিসে গিয়ে দেখেন অফিসার নেই। নানা হয়রানির পর আবেদন মঞ্জুরের ম্যাসেজ পেয়ে এনআইডি ডাউনলোড করে দেখেন তিনি ভেনেজুয়েলায় জন্মগ্রহণ করেছেন।
ওই ভুক্তভোগীদের মতো মৌলভীবাজার সদর ও বড়লেখায় অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলেন, পাসপোর্ট ও সাটিফিকেটসহ জরুরি প্রয়োজনের জন্য এনআইডি সংশোধন করেছিলেন। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে এনআইডিতে ভেনেজুয়েলা লিখা থাকায় দুশ্চিন্তায় এখন আর কোথাও তা কাজের জন্য দিচ্ছেন না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এটার দ্রুত সমাধান না হলেও তারা আর্থিক ও মানসিক চরম ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে তারা জোর দাবি জানান।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাচন কর্তকর্তা এসএম সাদিকুর রহমান জানান, ডাটাবেজ সরবরাহে সবগুলোতে দুর্ভাগ্যজনক জন্মস্থানে ভেনেজুয়েলা চলে আসছে। তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রত্যাশা করছেন খুব শিগগিরই এটি তারা সমাধান করবেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান বিষয়টি আমি গতকাল জেনেছি। এটা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব। এটা হয়ত টেকনিক্যাল প্রবলেম। আমাদের আইটি সেকশনে যারা আছে ওদের সাথে কথা বলব।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। বিষয়টি অবগত হলাম। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এই সমস্যা লাগবে প্রচেষ্ঠা চালাব।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি