April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 28th, 2021, 8:11 pm

জলবায়ু সম্মেলনে ৮ প্রস্তাব ও ৬ দাবি উত্থাপনের প্রত্যাশা টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার আদায়ের জন্য বাংলাদেশকে ভূমিকা রাখার জন্য বললো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ছাড়া আটটি প্রস্তাব উত্থাপন ও ছয়টি দাবির কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মলনে নিজেদের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরে টিআইবি। যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ৩১ অক্টোবর ২০১১ থেকে শুরু হতে যাওয়া কপ-২৬/জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মলনের আয়োজন করে সংস্থাটি। এতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত অবস্থানপত্রে বলা হয়- আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনকে প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রাক-শিল্পায়ন সময় থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য ১৯৬টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয় ছয় বছর আগে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের পথরেখা চূড়ান্ত করতে পারেনি দেশগুলো। ইতোমধ্যে তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগ থেকে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অধিক কার্বন নিঃসরণ বিশ্বব্যাপী ঘনঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও দাবনলের ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এমন বাস্তবতায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লার ব্যবহার ও রপ্তানি বেড়েছে এবং অর্থায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি প্রকল্পে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহায়তার অতিরিক্ত ও নতুন প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মুখ্যত দায়ী শিল্পোন্নত দেশসমূহ ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা কোনো তহবিল গঠন করা হয়নি। সার্বিকভাবে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রদত্ত অঙ্গীকার প্রতিপালনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা-শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষপটে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট-জিরো’ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, কয়লার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন প্রদান, ইনহ্যান্সড ট্রান্সপারেন্সি ফ্রেমওয়াকবর্ধিত স্বচ্ছতা কাঠামো ও প্যারিস রুলবুক চূড়ান্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কপ-২৬ সম্মেলনে আলোচনা হবে। ধারণা করা হচ্ছে প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সময়ে এ বিষয়গুলো নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য এ সম্মেলনই শেষ সুযোগ। বাংলাদেশ কর্তৃক কপ-২৬ সম্মেলনে উত্থাপনযোগ্য আটটি প্রস্তাব-
১. জলবায়ু বিষয়ক নীতি নির্ধারণে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করেতে হবে।
২. ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো লক্ষ্যমাত্র অর্জনে আইএনডিসিসহ প্রশমন বিষয়ক সব কার্যক্রমে উন্নত দেশগুলোর স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শতভাগ জ্বালানি উৎপাদনে উন্নত দেশগুলোকে পর্যাপ্ত জলবায়ু তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে সিভিএফ’র পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে দাবি উত্থাপন করতে হবে।
৪. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল প্রদান করতে হবে।
৫. জিসিএফসহ জলবায়ু তহবিলে ঋণ নয়, অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করতে হবে।
৬. দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় একটি ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ক আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে।
৭. ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ এবং এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রস্তুতিতে একটি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে এবং ঝুঁকি বিনিময়ে বীমার পরিবর্তে অনুদানভিত্তিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৮. জিসিএফ এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে যথা সময়ে ও দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ ছাড় করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অভিযোজন এবং প্রশমন বিষয়ক ৫০:৫০ অনুপাত মেনে অর্থায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের করণীয়-
৯. ২০২১ সালের পরে নতুন কোনো প্রকার কয়লা জ্বালানি নির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন করার ঘোষণা দিতে হবে।
১০. নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কপ-২৬ সম্মেলনে একটি আইনি সমঝোতা করতে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
১১. জীবন-জীবিকা, বন ও পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত পরিবেশের প্রভাব নিরূপণ সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে।
১২. একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি)-এ কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
১৩. জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করতে হবে।
১৪. বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ খাতের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করে প্রশমন বিষয়ক কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে এ খাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিযোগ বৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আগের সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকার তার অঙ্গিকার ও সে মোতাবেক বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু দক্ষতার অভাবে তা করতে পারেনি। আন্তরিকতারও ঘাটতি থাকতে পারে। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে কারিগরি দক্ষতা ও বিনিয়োগ সংগ্রহের দক্ষতা অর্জনের ঘাটতি রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য চেষ্টা দেখতে পাচ্ছি না।