নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ ৩ মাস ধরে জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব অচল থাকায় বিপুলসংখ্যক মামলার আলামত নষ্ট হওয়ার হুমকিতে রয়েছে। ধর্ষণ, হত্যা, পিতৃত্ব নির্ণয় ও অজ্ঞাত লাশের পরিচয় নির্ধারণসহ স্পর্শকাতর বিভিন্ন মামলায় ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) টেস্ট করা হয়। আদালত ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন। ফলে সারা দেশ থেকেই পরীক্ষার জন্য নমুনা আসছে। কিন্তু ল্যাব অচল থাকায় সময় মতো রিপোর্ট না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার চার্জশিট দিতে পারছে না। ফলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার এ ধারায় যারা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তার আছেন তারাও জামিন নিতে পারছে না। অচল অবস্থায় ল্যাবে প্রায় দেড় হাজার মামলার আলামত জমেছে। তাছাড়া ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পড়ে আছে আরো ৩ হাজার মামলার আলামত। আর রিপোর্ট না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মামলার ভবিষ্যৎ। জাতীয় ডিএনএ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং সিআইডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০৬ সালে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মালটিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাবরেটরির কার্যক্রম শুরু হয়। আর ২০১০ সালের এপ্রিলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভবনের ১১ তলায় আরেকটু বড় পরিসরে ওই ল্যাবরেটরি স্থানান্তর করা হয়। প্রতিনিয়ত পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়তে থাকায় পরে গঠন করা হয় ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। আর ল্যাবরেটরির কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভাগীয় সদরের ৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়। বিভাগীয় ল্যাবরেটরিগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গৃহীত মামলায় ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রফাইলিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ডিএনএ ল্যাব অচল থাকায় সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মামলার আলামতগুলো ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এগুলো থেকে শতভাগ সঠিক ফলাফল মিলছে না। সারা দেশে দুটি ল্যাবের মধ্যে জাতীয় ডিএনএ ল্যাব বন্ধ থাকায় সিআইডি ল্যাবে চাপ বাড়ছে। আর আলামতের যতো দ্রুত পরীক্ষা শেষ হবে ততোই ভালো ফলাফল আসে। আর রিপোর্টে হেরফের হলে সুবিচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
সূত্র জানায়, জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৪০টি মামলার ২৬ হাজার ৯৬৮টি আলামত পাঠানো হয়। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৫৩টি রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। বাকি ৪ হাজার ৪৮৭টি মামলার রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়নি। ল্যাব সংশ্লিষ্টরা রিপোর্ট না দেয়ার ব্যাপারে নানা রকম অজুহাত দেখাচ্ছে। ওই ল্যাব থেকে প্রতিবছর ৫০ শতাংশ কিংবা তারও কম মামলার ডিএনএ রিপোর্ট পুলিশ কিংবা আদালতকে সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি নমুনাগুলোর রিপোর্ট নানা কারণে সরবরাহ করা হয় না। মাসের পর মাস ধরনা দিয়েও ল্যাব থেকে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। আর ল্যাব বন্ধ থাকায় বিচারের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
এদিকে এ বিষয়ে জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাবেদুল আলম জানান, রিঅ্যাজেন্ট না থাকায় বিগত ২৭ অক্টোবর থেকে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ল্যাবে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মামলার আলামত জমেছে। যথাসময়ে অধিদপ্তরকে জানালেও এখনো রিঅ্যাজেন্টের ব্যবস্থা করা হয়নি। তার আগে জেনেটিক অ্যানালাইজার মেশিনের একটি পার্টস নষ্ট থাকায় ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এভাবে মাঝে মধ্যেই অচলাবস্থা তৈরি হয়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জাতীয় ডিএনএ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব আবেদা আকতার জœ্ন, রিঅ্যাজেন্ট সরবরাহ করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হবে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম