অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশি পিতা ইমরান শরীফ ও জাপানী মা নাকানো এরিকোর মধ্যে দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে বিরোধের বিষয়ে সমঝোতার জন্য উভয়পক্ষকে আরও ১২দিন সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই শিশু সন্তানের স্বার্থে তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা। এজন্য ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন,‘আমরা আশা করি শিশুদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে একটি সুন্দর সমাধানে পৌঁছবে উভয় পক্ষ। এতে বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
আদেশে সমঝোতা পৌঁছার জন্য পদক্ষেপ নিতে সিনিয়র আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি শিশু দুটির পিতা ইমরান শরীফের আইনজীবী। ওই সমঝোতা বৈঠকে জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরও উপস্থিত থাকবেন। উভয় পক্ষের আইনজীবীরা শিশু দুটির পিতা-মাতার মতামত নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
এদিকে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে একদিন মা ও পরের দিন পিতা শিশুদের সঙ্গে ঢাকার বাসায় অবস্থান করবেন। শুক্রবার ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত মা এবং ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বাবা মেয়েদের সঙ্গে থাকবেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে তারা শিশুদের সঙ্গে অবস্থান করবেন বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে জাপানে যাবার অনুমতি চেয়ে গতকাল আদালতে একটি আবেদন দিয়েছেন মা নাকানো এরিকো। আবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুমতি পেলে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন মা। মেয়েরা পিতার সঙ্গে সময় কাটাবে। আর পিতার জাপানে যে ঋণ আছে তা মা দেবে এবং পিতার বিরুদ্ধে জাপানে যে মামলা করেছে জাপান সরকার তা তুলে নিতে পদক্ষেপ নেবে মা। তাতেও যদি রাজি না হন, তাহলে তৃতীয় কোনো দেশে বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন পিতা। সেখানে যাবতীয় খরচ মা বহন করবেন। আইনজীবী শিশির মনির এ আবেদন উপস্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি মা ও বাবার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার নিবেদন জানান।
তবে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এ আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, শিশু দুটিকে একবার জাপানে নিয়ে যেতে পারলে আর তাদের বাংলাদেশে আনা যাবে না। আমাদের আদালতের আদেশ তারা মানবে না। তিনি বলেন, বাচ্চারা বাংলাদেশেই থাকুক। মা যখন খুশী এসে দেখা-সাক্ষাত করতে পারবেন। মা যখন বাংলাদেশে আসবেন তখন প্রয়োজন হলে পিতা বিমানের টিকিট কেটে দেবেন। সব ব্যবস্থাই পিতা করবেন। মা-বাবার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, সমঝোতার স্বার্থে এখন যে অবস্থা আছে সে অবস্থায়ই রাখা হোক। উভয়পক্ষের শুনানিকালে আদালত বলেন, মা-বাবার কারণে আজ বাচ্চা দুটি সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তারাই মূল ভিকটিম। তাই এর একটি সমাধান হওয়া দরকার।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে জাপানের টোকিওতে এরিকো ও ইমরানের বিয়ে হয়। এরিকো পেশায় চিকিৎসক, ইমরান তড়িৎ প্রকৌশলী। তাঁদের তিন সন্তান। এ বছরের শুরুতে এরিকো বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। এর মধ্যেই ইমরান তাঁর দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর জাপানের আদালত এরিকোর জিম্মায় সন্তানদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট জাপানি নারী রিট করেন। সেদিন রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে দুই মেয়েসহ তাদের বাবা ও ফুপুকে ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ৩১ আগস্ট হাজির হওয়ার পর সবার বক্তব্য শুনে দুই পক্ষের প্রস্তাবের ভিত্তিতে হাইকোর্ট আদেশ দেন। ইমরান শরীফের গুলশানের ভাড়া বাসায় দুই শিশুকে নিয়ে বাবা-মা আপাতত ১৫ দিন একসাথে থাকতে পারবেন বলে ওইদিন আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সাথে ঢাকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালককে এদের পারিবারিক পরিবেশের বিষয়টি দেখভাল করেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আর ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দুই শিশু ও তাদের মা-বাবার যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে হাইকোর্ট সমাধান-সমঝোতার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখেন।সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ফের শুনানি হয়।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম