অনলাইন ডেস্ক :
ফাহিম আশরাফকে আউট করেই তার দিকে ছুটে গেলেন আমের জামাল। কাছে গিয়ে পা দিয়ে একটু গুতো দিলেন তিনি ফাহিমের গায়ে। ততক্ষণে উইকেটের পেছন থেকে চলে এসেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তিনিও চাপড় বসিয়ে দিলেন ফাহিমের পিঠে। পরমুহূর্তে একসঙ্গে হেসে উঠলেন এই তিন পাকিস্তানি। ম্যাচটি তখন আসলে ওরকম হাসি-মজাতেই রূপ নিয়েছে। ক্রিকেটীয় উত্তেজনা কিছু যে আর ততক্ষণে অবশিষ্ট নেই! দুই দলের শক্তি-সামর্থ্য আর এই টুর্নামেন্টের ফর্ম মিলিয়ে ম্যাচটিকে ঘিরে রোমাঞ্চের উপকরণ ছিল যথেষ্টই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঠের ক্রিকেটে সেসবের প্রতিফলনই পড়ল না। ম্যাচের প্রথম ভাগে যদিও লড়াই হলো ভালোই।
পরের ভাগে সেভাবে দাঁড়াতেই পারল না খুলনা। লিটন কুমার দাসের রানে ফেরার দিনে আমের জামালের ৫ উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ এক জয় পেল কুমিল্লা। বিপিএলে বুধবার খুলনা টাইগার্সকে ৩৪ রানে হারাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ২০ ওভারে তোলে ১৪৫ রান। আগের ৫ ম্যাচ মিলিয়ে ৩৭ রান করা লিটন এবার দুই দফায় জীবন পেয়ে ৪ ছক্কায় ৩০ বলে করেন ৪৫ রান। রান তাড়ায় সেভাবে সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি খুলনা। গুটিয়ে যায় তারা ১১৫ রানে। ২৩ রানে ৫ উইকেট নেন জামাল। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগে কখনও ৪ উইকেটও ছিল না পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডারের। এবারের বিপিএলে ৫ উইকেট শিকারি প্রথম বোলার তিনিই। রোদ্রৌজ্জ্বল দিনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লার শুরুটা ছিল রয়েসয়ে।
প্রথম ৩ ওভারে রান আসে ৯। চতুর্থ ওভারে ঘুম ভাঙে লিটনের। জায়গা বানিয়ে লং অন দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে দেন তিনি নাসুম আহমেদকে। তাতে আত্মবিশ্বাসও পেয়ে যান তিনি। পরের দুই ওভারে ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে আরও তিনটি। মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে আপার কাট করে, মোহাম্মদ নাওয়াজকে টানা দুই বলে মিড উইকেট দিয়ে। এর প্রথমটিতে ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও গড়বড় করে বসেন আকবর আলি। নাওয়াজের বলে দুই ছক্কার পরের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ ছাড়েন খুলনা অধিনায়ক এনামুল হক। পরের ওভারে লিটন একটুর জন্য রক্ষা পান রান আউট থেকে। জীবন পেয়ে লিটন ছুটতে থাকেন লিটন। দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি মুকিদুল ইসলামকে। তবে আরেকপ্রান্তে টাইমিং করতেই ধুঁকছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
রান রেট তাই খুব বেশি ছিল না। ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর দশম ওভারে দুটি আর্ম ডেলিভারিতে দুজনকেই বিদায় করেন নাসুম। বিশেষ করে রিজওয়ানকে আউট করা ডেলিভারিটি ছিল অসাধারণ। অভিজ্ঞ পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান বুঝতেই পারেননি কিছু। তার ২১ রান আসে ২৮ বল খেলে। এবারের আসরে এটিই শেষ ম্যাচ রিজওয়ানের। গত আসরে ১০ ইনিংসে ৩৫১ রান করা ব্যাটসম্যান এবার ৫ ইনিংসে ৮৫ রান করতে পারলেন স্রেফ ৮২.৫০ স্ট্রাইক রেটে। তিনে নেমে দ্রুত দুটি বাউন্ডারিতে শুরুটা ভালোই করেছিলেন মৌসুমে প্রথমবার খেলতে নামা উইল জ্যাকস। তবে এসএ টোয়েন্টি খেলে আসা ইংলিশ ক্রিকেটার পুরো ভিন্ন কন্ডিশন ও উইকেটে এসে সাবলিল ব্যাটিং করতে পারেননি।
অন্য প্রান্ত থেকেও তখন রান আসেনি প্রত্যাশিত গতিতে। ২০ রানে জীবন পেয়েও শেষ পর্যন্ত ২৭ বল খেলে ২২ রানে বিদায় নেন জ্যাকস। দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য ছিল যার, সেই খুশদিল শাহ ৪ রানেই রান আউট হয়ে যান তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। হৃদয় নিজে পরে বিদায় নেন ১৭ বলে ১৬ করে। একসময় তাদের ১৩০ করা নিয়েই দেখা দেয় শঙ্কা। তবে শেষ দিকে কার্যকর ক্যামিও খেলেন জাকের আলি। এবারের আসরে কয়েকটি ম্যাচেই নিজের পেশির জোর ও স্কিলের উন্নতি দেখানো এই ব্যাটসম্যান শেষের আগের ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন পাকিস্তানি পেসার ওয়াসিমকে। শেষ ওভারে মাহিদুল ইসলামের ছক্কায় কুমিল্লার রান পৌঁছে যায় দেড়শর কাছে। রান তাড়ায় খুলনার শুরুটা ছিল রোমাঞ্চ জাগানিয়া।
প্রথম ওভারেই তানভির ইসলামকে ইনসাইড আউটে চার ও ছক্কা মারেন এনামুল হক। দুটি শটই ছিল চোখধাঁধানো। পরের ওভারে আলিস আল ইসলামকে বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি দুই দফায়। কিন্তু এমন শুরুর পর দ্রুতই হারিয়ে ফেলেন তিনি নিজেকে। আলিসের ওভারেই স্টাম্প সোজা বল লেট কাট করার চেষ্টায় উইকেট হারান খুলনা অধিনায়ক। তিনে নামা আফিফ হোসেন ৯ বলে ৫ রান করে আউট হন জ্যাকসের অফ স্পিন বাজে এক শটে। চলতি আসরে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে আকবর আলি ১ রানে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেও আউট হয়ে যান একটি বাউন্ডারি মেরেই। আগের ম্যাচে ওপেনিংয়ে ৩৩ রানের ইনিংস খেলা পারভেজ হোসেন ইমন এবার পাঁচে নেমে বিদায় নেন শূন্যতে।
এই পুরো সময়টায় একরকম দর্শক হয়েই ছিলেন এভিন লুইস। চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা ওপেনার পাওয়ার প্লেতে স্রেফ ৭টি বল খেলার সুযোগ পান, রান করেন ২। বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান পরেও আর কিছু করতে পারেননি। জামালকে একটি ছক্কা মারলেও এক বল পরই আউট হয়ে যান ১৪ বলে ১০ রান করে। খুলনার সম্ভাবনা একরকম সেখানেই শেষ। নবম ওভারে তাদের রান তখন ৫ উইকেটে ৪৯। পরের ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেছেন ব্যবধান কমাতে। কিছুটা লড়াই করে ২৪ বলে ২১ করেন নাহিদুল ইসলাম। একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রানে ফেরেন ফাহিম আশরাফ। শেষ দিকে ৩ ছক্কায় ১২ বলে ২৩ করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। এর ফাঁকেই আমের জামাল পূর্ণ করেন তার ৫ উইকেট। ৬ ম্যাচে ৪ জয়ের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স কুমিল্লা উঠে এলো পয়েন্ট তালিকার তিনে। টানা ৪ জয়ে আসর শুরু করা খুলনা হেরে গেল টানা ২ ম্যাচে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৪৯/৭ (রিজওয়ান ২১, লিটন ৪৫, জ্যাকস ২২, হৃদয় ১৭, খুশদিল ৪, জাকের ১৮*, মাহিদুল ১০, জামাল ০, তানভিল ১*; নাহিদুল ২-০-৫-০, নাসুম ৪-০-২১-২, ওয়াসিম ৪-০-৩৭-১, নাওয়াজ ৩-০-৩১-০, ফাহিম ৪-০-২৫-২, মুকিদুল ৩-০-২৮-০)।
খুলনা টাইগার্স: ১৮.৫ ওভারে ১১৫ (এনামুল ১৯, লুইস ১০, আফিফ ৫, আকবর ৫, পারভেজ ০, নাহিদুল ২১, নাওয়াজ ৭, ফাহিম ১৩, ওয়াসিম ২৩*, নাসুম ০, মুকিদুল ৪*; তানভির ৩.৫-০-২৯-২, আলিস ৪-০-৩০-১, জ্যাকস ৪-০-১৪-১, মুস্তাফিজ ৩-০-১৭-১, জামাল ৪-০-২৩-৫)।
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৩৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আমের জামাল।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা