নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জালানি সঙ্কটে বসে থকছে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। মভা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়াতে না পারায় লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বর্তমানে বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জালানি তেলের বাজার দুটোই ঊর্ধ্বমুখী। আগে গ্যাস কিংবা তেল যে কোনো একটির দাম বেশি থাকলেও অন্যটির কম থাকতো। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমন্বয় করা সম্ভব হতো। কিন্তু এখন দুটো পণ্যেরই দাম বাড়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জালানি সংকট থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। এমনকি কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনেই যেতে পারছে না। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রিড বিপর্যয়ের পর থেকে লোডশেডিং তীব্র আকার নিয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার জালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৫ হাজার ৯০০ ও ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো ডিজেলভিত্তিক। বিপিডিবি বর্তমানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে। তার মধ্যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবশ্য পুরোদমেই উৎপাদনে রয়েছে। কিন্তু২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের মতো ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে। ফলে জালানি সংকটের কারণে অন্তত ৩ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই বিদ্যুতের চাহিদায় বরাবরই প্রাধান্য পায়। কিন্তু গ্যাস সঙ্কট থাকায় ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলোর জালানি সরবরাহেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় জালানি আমদানিতেও সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কেন্দ্রগুলো থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সিংহভাগ মালিকানায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা। জালানি তেলের বিল পেমেন্ট জটিলতায় অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন সঙ্কটে পড়েছে। ফলে সেগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা বিপিডিবির পক্ষে কঠিন হচ্ছে। সরকার বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধ করতে পারছে না। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বিপিডিবির কাছে বকেয়া ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি। ওই কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় মফস্বল থেকে রাজধানী সর্বত্রই এখন লোডশেডিংয়ের সময় দীর্ঘ হচ্ছে। শুরু থেকে ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা থাকলেও সেটি এখন তা ৭-৮ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। দেশে দৈনিক যে পরিমাণ চাহিদা তৈরি হচ্ছে তাতে অন্তত দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে কখনো কখনো ওই সময়সীমা দীর্ঘও হচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ চাহিদা ও প্রাধান্যের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বরাবরই রাজধানীকে অগ্রাধিকার দেয়। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) সেখানে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে। সংস্থা দুটি বিদ্যুৎ বিতরণে এখন সবচেয়ে বেশি হিমশিম খাচ্ছে। বিতরণকারী অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের লোডশেডিংয়ের শিডিউল কমে এলেও ডিপিডিসি ও ডেসকো কোনোভাবেই কমাতে পারছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীর অফিস-আদালত, ব্যাংক পাড়া থেকে শুরু করে সর্বত্র অস্বস্তি নেমে এসেছে। অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ের কারণে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। মূলত পিক আওয়ারে রাজধানীতে চাহিদা ও উৎপাদনে ২৫০-৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান জানান, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। বিশেষ করে পিক আওয়ারে সঙ্কটটা বেশি দেখা দেয়। তবে ডিপিডিসির পক্ষ থেকে শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২