নিজস্ব প্রতিবেদক:
জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। যা দেশের জন্য ভয়ানক ও উদ্বেগজনক। মূলত অর্থের বিনিময়ে এদেশেরই একটি চক্র রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে এনআইডি কার্ড পেতে সহযোগিতা করছে। আর তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত ঢিমেতালে চলছে। ফলে ভিনদেশী নাগরিকরা এদেশের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং পাসপোর্টও হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বিদেশে গিয়েও দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। আর ওসব অপকর্ম সম্পন্ন করতে গিয়ে ধরা পড়ে যারা আটক হয়েছে তাদেরও অধিকাংশ জেল থেকে বেরিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের একটি অংশ ইতিমধ্যে এদেশের জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি অনেকে পাসপোর্টও হাতিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের পর যারা এসেছে তাদের বড় একটি অংশই জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি হাতিয়ে নিয়েছে। আর তার আগে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশ পাসপোর্ট পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। ওই অপতৎপরতা এখনো চলমান। বিষয়টি উদ্ঘাটিত হলেও কোনো এনআইডি বাতিলের রেকর্ড নেই। বরং ফাঁকফোকরে এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়ার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড প্রদানের ঘটনা ধরা পড়ার পর দুদক পৃথক পৃথক মামলায় প্রায় দেড় লাখ তালিকা উদ্ঘাটনের মাধ্যমে যে মামলা করেছে এখনো তার সুরাহা হয়নি। বরং চট্টগ্রাম ইসি অফিস থেকে ৫টি ল্যাপটপ চুরি যাওয়ার ঘটনা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর কিছু ল্যাপটপ নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়। ওসব ল্যাপটপে নিবন্ধনের তথ্য রয়েছে। সুচতুর একটি চক্র একটি ল্যাপটপ কিনে নিয়ে সেখান থেকে ৫৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার নামে ভোটার কার্ড সরবরাহ করা হয়। সেগুলো ছিল ইসির স্পেশালাইজড ল্যাপটপ। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির কাজে সারাদেশে একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩ হাজার ল্যাপটপ ব্যবহার হয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার পর সেগুলো ইসিকে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকেই কয়েকটি ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায়। আর সেখানেই ঘটে যায় বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা। তার আগে ২০০৮ সালে ৯৮ হাজার রোহিঙ্গা এনআইডি হাতিয়ে নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তারা ২০১৭ সালের আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে রিফিউজির মর্যাদায় থেকে বিভিন্ন অপপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদেশের নাগরিকত্বের সনদ হাতিয়ে নেয়। পরে কেউ কেউ পাসপোর্ট বািনয়ে বিদেশেও চলে যায়।
সূত্র আরো জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পক্ষে এদেশের জন্মনিবন্ধন, এনআইডি এবং পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা দুদকের পক্ষে অনুসন্ধানে উদ্ঘাটিত হওয়ার পর একাধিক মামলা হয়েছে। কিন্তু নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই ধরনের একটি সনদও বাতিল হওয়ার কোন রেকর্ড হয়নি। কক্সবাজারের বেসরকারি সংস্থা সুজনের পক্ষে দেড় হাজার রোহিঙ্গার অবৈধ এনআইডি সনদ প্রাপ্তির বিষয়টি ২ বছর আগে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। সেগুলোতে নির্বাচন কার্যালয়ের প্রদত্ত নাম্বারও রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটিও বাতিল হয়নি। তবে ১৫০টি ব্লক করা হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমানের তথ্যানুযায়ী শুধু কক্সবাজারেই ১৫ হাজার রোহিঙ্গা এনআইডি পেয়ে গেছে। আর দুদকের তথ্যানুসন্ধানে উদ্ঘাটিত হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার। বাংলাদেশে পুরনো, নতুন এবং এদেশে জন্ম নেয়া শিশু মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে। তারা এদেশীয় জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে খুব সহজেই হাতিয়ে নিয়েছে জন্ম সনদপত্র। পরবর্তীতে তাদের একটি অংশ হাতিয়ে নিয়েছে এআইডি। তারপর তারা পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়ায় তৎপর হয়। একপর্যায়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলে যায়। যেখানে আগে থেকেই স্থায়ীভাবে আসন গেঁড়েছে তাদের স্বজনরা।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম