নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাহাজ চলাচলে সন্দ্বীপ ও হাতিয়া নৌ-চ্যানেল ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রতি বছরই ওই চ্যানেলে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে পণ্যবোঝাই লাইটার জাহাজ। জাহাজ পরিচালনা ও ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, তলদেশের গভীরতায় তারতম্য এবং পর্যাপ্তসংখ্যক পাইলট না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে দুই সহস্রাধিক জাহাজের জন্য মাত্র ৪০ জন পাইলট রয়েছে। অথচ নিরাপদে নৌযান চলাচল নিশ্চিত করার জন্য পাইলট সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। জাহাজ পরিচালনা ও ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সন্দ্বীপ চ্যানেল ও সন্নিহিত সাগর জলসীমায় জাহাজ চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকটুকু পথ আড়াআড়ি পাড়ি দিতে হয়। তাতে করে ওপর থেকে নেমে আসা স্রোত এবং সাগরের জোয়ার জাহাজকে পাশ থেকে ধাক্কা দেয়। জাহাজ সোজা চলাচলে সাধারণত ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু যে কোন একপাশ থেকে ধাক্কা খেলে জাহাজ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে দুর্বল জাহাজগুলোর দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার শঙ্কা থাকে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ওই আড়াআড়ি পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোন পথ নেই। সাগরের নিচে মাটি কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। সেক্ষেত্রে জাহাজগুলোকে অবস্থা বুঝে খুবই সতর্কতার সঙ্গে চলতে হয়। কখনও বা তলদেশ মাটি স্পর্শ করে গেলে জাহাজ উল্টে বা কাত হয়ে যায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, জাহাজ চলাচলে পাইলট সমস্যা এখন প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। মাস্টাররা ছোট লাইটারগুলো চালিয়ে থাকে। কিন্তু দক্ষ মাস্টারের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। আর অপেক্ষাকৃত বড় লাইটার জাহাজগুলো চালানোর জন্য পাইলট প্রয়োজন। কিন্তু ওই পাইলট প্রয়োজনের তুলনায় শুধু কমই নয়, নেই বললেই চলে। বন্দর বহির্নোঙ্গরের মাদারভেসেল থেকে পণ্য নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজসহ মোট চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা ২২শ থেকে ২৩শ। কিন্তু পাইলট আছেন মাত্র ৪০ জন। তাতে করে প্রয়োজন অনুযায়ী পাইলট সরবরাহ করতে পারে না অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। তাছাড়া একজন পাইলট পেতে গেলে নিয়ম বহির্ভূত অনেক বাড়তি খরচের ব্যাপার রয়েছে বলেও জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা কন্টেনার ভর্তি আমদানির পণ্যগুলো জেটিতে খালাস হয়ে সড়ক বা রেলপথে পরিবাহিত হলেও বহির্নোঙ্গরে আনলোড হওয়া কার্গো অর্থাৎ খোলা পণ্যগুলোর বেশিরভাগই জলপথেপরিবাহিত হয়। লাইটার জাহাজগুলো ওই পণ্য পরিবহন করে থাকে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টর হওয়া সত্ত্বে¡ও নিরাপদে জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতে সরকারি দায়িত্বশীল সংস্থা ব্যর্থ- এ অভিযোগ অনেক পুরনো। আর সন্দ্বীপ চ্যানেল দুর্ঘটনার জন্য বিশেষায়িত হয়ে আছে। সেখানে অনেকটা নিয়মিত বিরতিতেই ডুবছে নৌযান। যাত্রীবাহী নৌযানডুবিতে মরছে মানুষ আর লাইটার জাহাজডুবিতে তলিয়ে যাচ্ছে অতি মূল্যবান আমদানির পণ্য। প্রতিবছরে অন্তত কয়েকটি করে জাহাজডুবি হচ্ছে। তাতে সাধারণত থাকে গম, ভুট্টা, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ আমদানির বিভিন্ন পণ্য। নৌযান চলাচলের পথ নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর প্রতি চেয়ে আছেন অভ্যন্তরীণ শিপিং সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক