এবার নারী দিবসে জাতীয়ভাবে জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন খুলনার একজন পাখি দত্ত হিজড়া। বয়স ৩২ বছর বয়সী পাখি দত্ত হিজড়া রবিবার সকালে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙার খোকন সড়কে নিজ বাসায় ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে জানান তার সুখ-দুঃখের কথা।
এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী, খুলনার মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, কোনো কাজ না পেলে তাকে হয়তো জীবন ধারনের জন্য হিজড়া পেশায় ফিরে যেতে হবে। যেটা তার কাম্য নয়।
পাখি জানান, তাদের আদি বাড়ি বগুড়া জেলার জামালগঞ্জে। কাজের আশায় তার বাবা তার মাকে আশির দশকে খুলনার ডুমুরিয়ার মিকসিমিলে চলে আসেন। তারপরে তার বাবা খুললার দৌলতপুর একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরি নেন। এখানেই ১৯৯২ সালের ২৭ ফেব্রয়ারি পাখি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মংগল দত্ত এবং মা রীনা রানি দত্ত। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল তার জীবন। কিন্তু বয়স যখন ১১-১২ বছর। বয়ঃসন্ধিকাল তখন তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বুঝতে পারে সে অন্য সাধারণ মেয়ের চেয়ে আলাদা। এরপর থেকে শিক্ষকরা তার স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে গড়িমসি করলেও পরবর্তীতে সে স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু কোন ছেলে বা মেয়ে তার সঙ্গে মিশতো না। তাকে এড়িয়ে চলতো সকলেই।
এরপর প্রচার হয়ে যায় সে হিজড়া। তখন তার বাবা-মা সমাজের প্রতিহিংসার শিকার হন।
তাদের পরিবারকে একঘড়ে করা হয়। তখন সে বাধ্য হয়ে পিতা মাতার সংসার ছেড়ে খুলনার টুটপাড়া এক হিজড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দেয়।
এখানে তার কাজ ছিল অন্য হিজড়াদের সঙ্গে দলবেঁধে শিশুদের নাচানো, বাজার থেকে তরকারি, মাছ সংগ্রহ করা। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। এই সময় পাখি হিজড়া গোষ্ঠীর প্রধানের দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। এই কাজে তার মন বসছিল না। তাই একদিন সে আরও দুই জনকে নিয়ে পালিয়ে আসে। কিন্তু কি করবে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে। বাধ্য হয়ে সে ট্রেনে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করে।
এর মধ্যে বাবা মারা গেলে তাদের সংসারে নেমে আসে কালো মেঘ। এই সময় একজন এনজিও পরিচালকের সঙ্গে তার কথা হয় এবং তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। পরিচয় হতে থাকে সমাজসেবা ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এনজিওতে কাজ করার পাশাপাশি তিনিসহ আরও তিনজন ঢাকা থেকে পাইকারি দামে শাড়ী, থ্রীপিছ খুলনায় এনে বিক্রি শুরু করেন। মোটামুটি লাভের মুখ দেখা যায়।
এরপর ২০১৮ সালে নক্ষত্র যুব মানব কল্যাণ সংস্থা গঠন করে খুলনা যুব উন্নয়য় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে সমাজসেবা, নারী-শিশু ও বয়স্কদের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন পাখি দত্ত।
এর মধ্যে ২০২০ সালে দেশে করোনা শুরু হলে পাখি ও তার দল করোনা রোগীদের সেবা, খাবার সংগ্রহ বহুমুখী কাজ করে। লকডাউনে ঘরে বসে না থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে যায় করোনা রোগীদের পাশে। তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
তিনি তার কাজের জন্য খুলনা মহানগরী, জেলা ও বিভাগে ২০২২ ও ২০২৩ সালে সেরা জয়িতা মনোনীত হয়। আর এবছর নারী দিবসে পেল রাষ্ট্রীয় সেরা জয়িতা পুরস্কার।
তবে অসহায়ভাবে পাখী দত্ত হিজড়া জানালো তার বৃদ্ধ অসুস্থ মা এবং সপ্তম শ্রেণীতে পড়া একমাত্র বোনকে নিয়ে তাদের দারুণ অর্থকষ্টে দিন কাটানোর কথা। তার এখন দরকার একটা চাকরি।
আর না হলে তাকে আগের পেশায় ফিরে যেতে হবে। যা সে চায় না।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি