April 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, February 19th, 2023, 9:51 pm

জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানি ব্যাহত

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিদেশ থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মূলত ডলার সঙ্কটে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যদিও স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতশারী কোম্পানিগুলোই দেশের ওষুধের জোগানের ৯০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি ও স্নায়বিকসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। অতিপ্রয়োজনীয় ওসব ওষুধের আমদানি চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৯১ শতাংশ কমেছে। তাছাড়া ওষুধের পাশাপাশি হ্রাস পেয়েছে কাঁচামাল, ওষুধ শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদির আমদানিও কমে গেছে। স্বাস্থ্য খাত এবং ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে মোট ৫৩ কোটি ৬৪ লাখ বা ৫৩৬ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে মাত্র ৪৫ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ওষুধ আমদানিতে এলসি ৯১ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমেছে। ওষুধ আমদানির এলসি নিষ্পত্তিতেও একই পরিস্থিতি। গত অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৫৪৭ মিলিয়ন ডলারের ওষুধের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ওষুধ আমদানিতে মাত্র ৪৯ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ হিসাবে ওষুধ আমদানির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৯০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ও কভিড টেস্ট কিট আমদানির চাপ ছিল। মূলত ডলার সংকটের কারণেও ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ ও ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া চলতি অর্থবছরে ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির নতুন এলসি ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৭০৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের ওষুধের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ওই খাতের নতুন এলসির পরিমাণ ৫৫৪ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আবার ওষুধের কাঁচামাল আমদানির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬৪১ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের এলসি নিষ্পত্তি ৫৮০ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সূত্র জানায়, কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাবে এখন দেশে উৎপাদিত ওষুধের দামও বাড়ছে। পাশাপাশি ওষুধ শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে যন্ত্রপাতি আমদানিতে খোলা নতুন এলসি কমেছে ৪০ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ১২০ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হলেও চলতি অর্থবছরে তা মাত্র ৭২ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি নিষ্পত্তিও ৩১ শতাংশ কমেছে। ওষুধের পাশাপাশি এখন ক্যান্সার, কিডনি, চর্মরোগ, হৃদরোগ, স্নায়বিক ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহূত মেডিকেল ডিভাইসেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে অভাব দেখা দিয়েছে রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন রি-এজেন্টের (রোগ-নিরীক্ষার বিভিন্ন উপকরণ)। তাতে এখন বন্ধের পথে জরুরি বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বর্তমানে জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল ডিভাইস চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে না পারায় হৃদরোগের অস্ত্রোপচার আগের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে হৃদরোগে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে। বর্তমানে আদমানিনির্ভর হার্টের ভালভের সংকট খুব বেশি। একই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখার অক্সিজেনেটরেরও সংকট দেখা দিয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ওষুধ আমদানি করা হয়। আর চীন, জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় ওষুধের কাঁচামাল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল সংগ্রহে প্রভাব পড়েছে। তাতে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডিভাইস উৎপাদন করতে পারছে না। একই সঙ্গে করোনা মহামারীর কারণে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বহু কর্মী ছাঁটাই করেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না। আর জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে হার্টের ভালভ ও অক্সিজেনেটর আমদানি করা হয়। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বেলারুশ, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে ওসব ডিভাইস তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে। বর্তমানে দেশে ২০৬টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৪৬ হাজার ৫০৭ মিলিয়ন টাকার ওষুধ এবং ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করছে। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৫৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান জানান, যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে পেট্রোকেমিক্যালের দামের ঊর্ধ্বগতি। তাছাড়া ডলারের সঙ্কট এলসি খুলতে চায় না ব্যাংক। ফলে কাঁচামাল সংকট হলে পাওয়া যাবে না। আগামী মাস থেকেও সংকট তৈরি হতে পারে। দুই মাসের মতো সময় ধরে চাহিদা অনুযায়ী এলসি খোলা যাচ্ছে না।