এম. মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার:
আমরার বাড়ীত জীবনেও একটা রিক্সা ঠেলাগাড়ী যায় না। আপনারা আমরার দুঃখো কান দেখউক্কা। সাংবাদিক কেউ আমরার পুলোর (ব্রীজ) কথাকান লেখোইন না। কথাগুলো বলেছেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল খালিক সহ স্থানীয়রা।
বৃটিশ আমলের ছোট্ট একটি খাল (জুড়ী) হতে আজ জুড়ী নদীর সৃষ্টি। আর এ জুড়ী নদীর নামানুসারেই ২০০৪ সালের ২৬ আগস্ট গঠিত হয় মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা জুড়ী। ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে বাংলাদেশের বৃহৎ হাওর হাকালুকি অতিক্রম করে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে এ জুড়ী নদীটি।
উপজেলা সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রাম হতে বীরগোগালী গ্রামের (রাণীমুড়া ঘাট) মধ্যে জুড়ী নদীতে সংযোগ ব্রীজ না থাকায় হাজার হাজার মানুষ বৃটিশ আমল থেকে নৌকা ব্যবহার করে নদী পারাপার হন।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রায় ৬ কিঃমিঃ পথ পায়ে হেটে উপজেলা শহর জুড়ীতে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, স্বাস্থ্য সেবা ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করছে। নদীতে ব্রীজ না থাকায় যাতায়াতের জন্য যানবাহনের কোনো ব্যবস্থা নাই কয়েকটি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মানুষের। যাতায়াতে নৌকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। ব্রীজটি নিমার্ণ করে দিবেন বলে, নির্বাচন আসলেই জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর ।
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের এলাকার কাশিনগর,পাতিলাসাঙ্গন, বটনীঘাট, বড়াডহর গ্রামের লোকজন এ নদীর রাণীমুড়া ঘাটে নৌকা পার হয়ে উপজেলা ও জেলা শহরে যান। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাদের আত্বীয় স্বজনের বাড়ীতে যে কোন সময় আসা যাওয়া করতে অনীহা প্রকাশ করার কারণে ভালো পরিবারে আমাদের ছেলে মেয়ে বিয়ে দিতে পারি না। বিশেষ করে এ গ্রামের শিক্ষার্থীরা জুড়ী শহরে অবস্থিত টিএনখানম সরকারী কলেজ, জুড়ী মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়,মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিকন্দর মাহমুদা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। কিন্তু শিশুদের কে সকালে বাড়ী থেকে বিদায় দিয়ে সারাদিন আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। কারণ, নদীতে বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধি হয়ে শ্রোতের মধ্যে বাচ্চারা ঝুঁকি নিয়ে নিজে নিজে নৌকার রশি টেনে পার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। অতিতে এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রমা চন্দ বলেন, আমাদের গ্রামে এক হাজার মানুষের মাঝে প্রায় ৬০০ মানুষ সনাতন ধর্মাবলম্বী। যারা সারা জীবন নৌকায় ভোট দেই। রাণীমুড়া বাজারের ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ বলেন, বীর গোগালী গ্রামের প্রায় ৭০০ ভোটার ভোটের সময় নৌকায় পার হয়ে কাশিনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ তারা মিয়া জানান, জুড়ী-বড়লেখার বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন সর্বশেষ নির্বাচনে রাণীমুড়া নামক স্থানে এক জনসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, আমি নির্বাচিত হলে আপনাদের এলাকার সর্বসাধারণের প্রাণের দাবী রাণীমুড়া-কাশিনগর ঘাটে ব্রীজ নির্মাণ করে দিবো। কিন্তু আমরা অসহায়, বলার কিছুই নাই। তিনি ব্রীজ করলেন জনগণের কম সুবিধাজনক স্থান কাপনাপাহাড় (বিন্দার ঘাট) চা বাগানে। আমাদের কথা কেউ শুনে না। আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পরিবেশ মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, এখানে ব্রিজ নির্মাণ হলে এতদ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। স্থানীয় গ্রামগুলোর মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাশিনগর রানীমুড়া ব্রিজ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি