April 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, May 23rd, 2022, 9:33 pm

জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিতে বাড়তে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আবারো বাড়ানো হয়েছে জেট ফুয়েলের দাম। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান ভাড়াও বেড়ে চলেছে। উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জ্বালানি জেট ফুয়েল প্রতি লিটারের দাম দুই বছর আগে ছিল মাত্র ৪৬ টাকা। এখন ওই ফুয়েলের দাম সরকার নির্ধারিত দাম ১০৬ টাকা লিটার। গত ১৮ মাসে জেট ফুয়েলের দাম প্রায় ১২২ শতাংশ বেড়েছে। ফলে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো যাত্রী পরিবহন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেড় বছর আগে যে রুটের ভাড়া ছিল আড়াই হাজার বা তার একটু বেশি, ওই ভাড়া এখন প্রায় ৫ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। যা যাত্রীদের ওপর বাড়তি ভাড়ার বোঝা সৃষ্টি। বিপিসি এবং উড়োজাহাজ খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জেট ফুয়েলের দাম প্রতি মাসে ধাপে ধাপে বাড়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান ভাড়াও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তাতে কমছে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ফ্লাইট ও যাত্রী সংখ্যা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বিমান সংস্থাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভাড়া করোনার আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মূলত বিমান ভাড়ার ৪০ শতাংশ জেট ফুয়েলের ওপর নির্ধারণ হয়। গত প্রায় দুই বছরে ওই জ্বালানির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভাড়াও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এভাবে বাড়তে থাকলে আকাশপথে যাতায়াতে যাত্রীদের ব্যয় আরো বাড়বে এবং তৈরি হবে নেতিবাচক ধারণা।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো-কমানোর কাজটি করে থাকে। আর মাঠপর্যায়ে বিপণনের কাজটি করে বিপিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমেই বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। এখন জেট ফুয়েলের আন্তর্জাতিক মূল্য প্রতি লিটার ১ দশমিক শূন্য ৪ ডলার। ওই হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারেই এখন জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি ১২৫ থেকে ১২৬ টাকা। সরকার ভর্তুকি দিয়ে ১০৬ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে না কমলে জেট ফুয়েলের দাম কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০২১ সালে জেট ফুয়েলের চাহিদা ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন, যার পুরোটাই আমদানিনির্ভর।
সূত্র আরো জানায়, গত জানুয়ারিতে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৭৩ টাকা। ৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে ৭ টাকা বাড়ানো হয়। ৮ মার্চ প্রতি লিটার ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৭ টাকা নির্ধারণ করে বিপিসি। পরে ৭ এপ্রিল আবার ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ১০০ টাকা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সবশেষ গত ১৫ মে বাড়ানো হয় আরো ৬ টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ওয়েবসাইটে নতুন ওই পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্যতালিকা দেয়া রয়েছে। ওই মূল্যতালিকায় বলা হয়েছে, ১৫ মে থেকে জেট ফুয়েলের নতুন মূল্যতালিকা কার্যকর করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী জেট ফুয়েলের দাম স্থানীয় ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ১০৬ টাকা এবং আন্তর্জাতিক রুটের জন্য ১০৯ টাকা।
এদিকে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় দেশের এয়ারলাইন্সগুলো আরেক দফা ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এভাবে ভাড়া বাড়তে থাকলে আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া পর্যটনশিল্পের ওপরও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মানুষ ভ্রমণবিমুখ হবে। ফলে দেশের পর্যটনখাতও পিছিয়ে যাবে। করোনা মহামারির আগে যখন জেট ফুয়েলের দাম ৪৬ টাকা লিটার ছিল, তখন ঢাকা-যশোর রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল দুই হাজার ৭০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮শ টাকায়। একইভাবে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৩ হাজার ৭শ, এখন ৫ হাজার ৮শ টাকা। ২ হাজার ৭শ টাকা থেকে বেড়ে ঢাকা-সৈয়দপুরের ভাড়া এখন ৪ হাজার ৮শ টাকা। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীর ভাড়া হয়েছে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা। অথচ করোনার আগে যা ছিল ২ হাজার ৭শ টাকা। এখন ওই ভাড়া আরো বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।
অন্যদিকে এখন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার। ফ্লাই ঢাকা ও এয়ার অ্যাস্ট্রা নামে আরো দুটি উড়োজাহাজ সংস্থা অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু যে হারে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে এয়ারলাইন্সগুলোর টিকে থাকাই কঠিন হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলামের মতে, এখন পর্যটনে অফ মৌসুম। দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা কম। এর মধ্যে জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে ভাড়া বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কারণ উড়োজাহাজ পরিচালন ব্যয়ের ৪০ শতাংশই জ্বালানি খরচ। ভাড়া বাড়ালে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। করোনার সময় বিশ্বের সব দেশে প্লেন চলাচল বন্ধ ছিল। তখন পর্যটন খাত তথা হোটেল এবং শিল্প কারখানাও বন্ধ ছিল। তাতে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়েছে। এখন এয়ারলাইন্সগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অন্যান্য সেক্টরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের উচিত জেট ফুয়েলের দাম কমানো এবং এই খাতে ভ্যাট কমিয়ে আরো ভর্তুকি দেওয়া।