নিজস্ব প্রতিবেদক :
সারাদেশেই করোনা মহামারী ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অধিকাংশ জেলাতে উন্নত জীবনদায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ফলে বিদ্যমান কড়া লকডাউনের মধ্যেও বিভিন্ন জেলা থেকে কভিড রোগীরা সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি করোনা হাসপাতালে এসে ভিড় করছে। রাজধানীর কভিড ডেডিকেটেড সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া রোগীর ৭০ শতাংশই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। জেলা পর্যায়ে জরুরি চিকিৎসা স্বল্পতার কারণেই ওসব রোগীকে স্বজনরা ঢাকায় নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। ভুক্তভোগী এবং স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে রাজধানীতে ১৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল এবং ২৭টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত এক মাস ধরেই ওসব হাসপাতালে আগের তুলনায় রোগী ভর্তির হার বেড়েছে। বর্তমানে সরকারি ১৬টি হাসপাতালের মধ্যে ৭টিতে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। ওসব হাসপাতালে ১১২টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। আর ৫টি হাসপাতালে ৭১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে মাত্র কয়েকটি বেড খালি ছিল। তাছাড়া করোনা রোগীদের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্মিত ডিএনসিসি কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের ২১২টি আইসিইউ শয্যার বেশিরভাগেই রোগী রয়েছে। যদিও ওই হাসপাতালের সব আইসিইউ এখনো সক্রিয় হয়নি। তাছাড়া অন্য ৩টি হাসপাতালের একটিতেও কোনো আইসিইউ শয্যা নেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারী শুরু থেকেই তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে সংকটাপন্ন রোগীদের নিয়ে স্বজনদের এভাবে ঢাকার দিকে ছুটতে হতো না।
সূত্র জানায়, রাজধানীর বেসরকারি ২৭টি হাসপাতালের মধ্যে ১১টি হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের সবক’টি সব শয্যায় সংকটাপন্ন করোনা রোগী রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ শয্যার ৭০ শতাংশেই রোগী ভর্তি আছে। একই সঙ্গে সাধারণ শয্যায়ও রোগী বেড়েছে। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি করোনা হাসপাতালের করোনা ইউনিট, আইসিইউ ও এইচডিইউতে ভর্তি রোগীর তিন-চতুর্থাংশের কাছাকাছি সংখ্যক ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে। বেশির ভাগ জেলায় প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা না থাকায় সংকটাপন্ন অবস্থায়ই রোগীদের রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করানো হচ্ছে। বেশির ভাগ রোগীই সংকটাপন্ন অবস্থায় ওসব হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছে। বর্তমানে বিভাগীয় হাসপাতালেও ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি থাকায় রোগীরা ঢাকায় আসতে বাধ্য হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড ১৩০টি হাসপাতালের মধ্যে ৫২টিতে আইসিইউ সেবা নেই। ১৭টি হাসপাতালে নেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা। তার মধ্যে ৩২টি জেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইসিইউ নেই। মূলত জেলা পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা রাজধানীর মতো গড়ে ওঠেনি। একই সঙ্গে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতরা এখনো কভিড পজিটিভ রোগীর ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হয়ে ওঠেনি। তারা কেন্দ্র থেকেও সেসব সুবিধা ও নির্দেশনা পায়নি। ফলে জেলা পর্যায়ের অপূর্ণতা এবং অদক্ষতার ফলে রাজধানীতে রোগীরা ভিড় করছে।
এদিকে বিদ্যমান অবস্থা প্রসঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর সিংহভাগই দেশের অন্যান্য জেলা থেকে এসেছে। তাদের মধ্যে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য আগত রোগীর অর্ধেকই সংকটাপন্ন অবস্থায় আসছে বলে জানালেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান। তিনি জানান, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর ৬০-৭০ শতাংশ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে। ভর্তি হতে আসা অর্ধেক রোগীর অবস্থায়ই সংকটাপন্ন। ১০টি আইসিইউ শয্যার সবক’টি এখন রোগীতে পূর্ণ। একটা শয্যা পেতে অনেক রোগী অপেক্ষমাণ থাকছে। এমন অবস্থায় আইসিইউ ইউনিটে আরো ১০টি শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া রাজধানীর বেসরকারি করোনা হাসপাতাল পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংকটাপন্ন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের জন্য ৪২টি আইসিইউ শয্যা বরাদ্দ রয়েছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে ওসব শয্যার সবক’টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। ১০ জনের বেশি সংকটাপন্ন রোগী আইসিইউ শয্যার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। তাছাড়া সাধারণ ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তির ৭০ শতাংশই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডা. ইশতিয়াক।
অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল জানান, তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তারা কী করছে সেটা এখনো কেউ পর্যবেক্ষণ করছে না। জেলা পর্যায়ে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা ও করোনা রোগীদের ব্যবস্থাপনা জোরদার করা জরুরি। একই সঙ্গে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। তবে মহামারী শুরু হওয়ার পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সরকারি সংস্থাগুলো জরুরি চিকিৎসার পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানান, জেলা পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা জোরদার করা হচ্ছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনো রোগীই সরকারি হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। রাজধানীতে রোগী এলে তাদেরও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। তবে উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোতে অনেক জরুরি সেবা নেই। সেগুলো নিয়ে সরকার কাজ করছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ