April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, February 24th, 2022, 12:53 pm

ঝিনাইদহে গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদী আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত ভাঙনে বসতভিটা ও চাষের জমি হারিয়ে অনেকে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। যে হাতে মুঠো ভরে সাহায্য দিতো অন্যকে, সেই হাত এখন সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়।

অনেকে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ তখন যে টাকা ছিল তা দিয়ে নতুন জমি কিনতে পারত।

কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক মন্ডল তাদের একজন।

গত কয়েক বছরে তিনি নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বাঁচতে অন্তত সাতবার জায়গা বদল করেছেন।

এক সময় তার একটি টিনশেড ঘর, দশ বিঘা ফসলি জমি থাকলেও এখন তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

মালেক বলেন, ‘ভিটেবাড়ি আর চাষের জমি সবই চলে গেছে গড়াই নদীর গর্ভে। একটা সময় ছিল যখন আমি অন্যদের সাহায্য করতাম। এখন আমি অন্যদের কাছে সাহায্য চাই।’

মালেকের মতো নদীতে বাড়িঘর ও জমি হারিয়েছে বহু মানুষ।

একই গ্রামের আব্দুর রহিম মন্ডল জানান, তিনি বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছেন ছয় বার। তারও ৮ বিঘা জমি ছিল। পাঁকা পোতার টিনের চৌরি ঘর ছিল। বাড়িতে গরু-ছাগল ছিল। যা হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। তারও সবকিছু চলে গেছে এই গড়াই নদীতেই।

এই অবস্থা ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের উত্তরপাড়ার। যে পাড়াতে ৪০টি পরিবার বসবাস করতেন, এখন সেখানে আছেন ৫টি। বাকিরা নদী ভাঙনে সব হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে যাবাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। যারা এখনও আছেন তারাও নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে।

সরেজমিন তথ্য নিয়ে জানা গেছে, শৈলকুপার সারুটিয়া, ধলহরচন্দ্র ও হাকিমপুর ইউনিয়নের নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে এখন আতংক বিরাজ করছে। শৈলকুপার বড়ুরিয়া থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল ধরেছে। হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা ও খুলুমবাড়িয়া, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া, নতুনভুক্ত মালিথিয়া, চরপাড়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজার ঝুকির মুখে পড়েছে। মানচিত্র বদলের পাশাপাশি ঘর, বাড়ি ও চাষের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, এবছর যে পরিমাণ ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে যে স্থানে তারা আছেন সেখানেও থাকতে ভয় পাচ্ছেন। রাতে ঘুমানোর পর মাঝে মধ্যে ভয়ে জেগে ওঠেন।

মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, তাদের মসজিদটি ছিল কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঝে। এখন চলে গেছে নদীর পাড়ে। মসজিদটিও ভেঙে পড়ার আশংকায়।

তিনি আরও জানান, উত্তরপাড়া শেষ হয়ে গেছে, এবার মাঝেরপাড়া নদী গর্ভে চলে যাবে। এখনই স্থায়ী বাঁধ না দিলে গোটা গ্রামই বিলীন হবে।

এ ব্যাপারে সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক জানান, কৃষ্ণনগর গ্রামের মানুষগুলো বাঁচাতে হলে এখনই স্থায়ী বাঁধ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি।

উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল জানান, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শৈলকুপা শাখা কর্মকর্তা বিকর্ণ দাস জানান, ঝিনাইদহ অংশে ২০ কিলোমিটার গড়াই নদী রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে বড়ুরিয়া এলাকায় কিছু কাজ করিয়েছেন তারা। এছাড়া নদী পাড়ের মানুষগুলো রক্ষায় বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর ও লাঙ্গলবাঁধ এলাকার ২৩৫ কোটি টাকার ৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজের একটা প্রাক্কলন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রতই কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।

—ইউএনবি