অনলাইন ডেস্ক :
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১লা ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ শ্রমিকসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আহত শ্রমিকরা হলেন শাহিনুর আক্তার (১৮), নুর মোহাম্মদ (২৫), তাসলিমা (২৬), জিয়া (২৫), মনিরুল (২৪), সাফিনা আক্তার (১৮), মুক্তি আক্তার (৩২), কামাল (২৩)। তাদের মধ্যে মুক্তি ও কামালকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও বাকিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্রমিকরা জানান, শনিবার টিভলি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ফিনিশিং সেকশনের ফিনিশিং সহকারী রিপা আক্তারকে লাঞ্ছিত করে কারখানার পঞ্চম তলার উৎপাদন ব্যবস্থাপক লুৎফর রহমান। এ সময় রিপাকে ধাক্কা দিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে ওইদিনই বিচারের দাবিতে শ্রমিকরা উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি শুরু করেন। পরে শ্রমিকরা ১২ দফা দাবি উল্লেখ করে মালিক পক্ষের কাছে দাবিনামা উপস্থাপন করেন। গত সোমবার শ্রমিকরা উৎপাদন কাজে যোগ না দিয়ে বাসায় চলে যান। পরে মালিক কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার (১লা ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে (নো ওয়ার্ক, নো-পে) অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণার নোটিশ টানিয়ে দেয়। সকাল ৮টায় শ্রমিকরা কারখানায় এসে বন্ধের নোটিশ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় তারা পাশের রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সামনে এসে শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এসময় পুলিশ গ্যাসগান ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শ্রমিকরা সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আর বি এস আর ফ্যাশন লিমিটেড এবং বিসিক ফকির মার্কেটে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর ত্রিমুখী হামলা চালায়। পরে পুলিশ ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষ, সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আর বি এস আর ফ্যাশন লিমিটেড ও রেডিসন অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। টিভলী অ্যাপারেলস লিমিটেডের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে ঘটনার দিনই উৎপাদন ব্যবস্থাপককে অপসারণ করা হয়েছে। এরপরও শ্রমিকরা অযৌক্তিক দাবি জানায়, যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা উৎপাদন ব্যবস্থাপকের অপসারণ চেয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু বহিরাগত কিছু শ্রমিক নেতা সাধারণ শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানান, টিভলি অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে অন্যান্য কারখানায় হামলা চালায়। পুলিশ বাধা দিলে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি