অনলাইন ডেস্ক :
বিকেল ৫টাতেই যেন ঝুপ করে নেমে গেল সন্ধ্যা। ঘন কালো মেঘে চারপাশে যেন এলো প্রায় আঁধার। ফ্লাড লাইট জ¦ালিয়েও খেলা চালানো গেল না। দুই আফগান ব্যাটসম্যান যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। দিনটি তো পার করে দেওয়া গেল। তবে তাদের এই স্বস্তি কেবলই সাময়িক। এই ম্যাচে যে আঁধার ঘিরে ধরেছে তাদের, সেখানে আলোর কোনো দিশা পাওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা আর নেই। বাংলাদেশের লিড আগের দিনই চলে গিয়েছিল আফগানদের প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ দিন তা পৌঁছে গেছে এভারেস্ট চূড়ায়। অঙ্কের হিসেবে তা ৬৬২ রানের। প্রায় ২৩ বছর আর ১৩৮ ম্যাচের টেস্ট ইতিহাসে এত বড় লক্ষ্য আগে কখনও দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সব দল মিলিয়েই এর চেয়ে বড় লক্ষ্য দেওয়ার নজির আছে ¯্রফে আর সাতটি। রেকর্ড রানের লক্ষ্য দেওয়ার এই মালা বাংলাদেশ গাঁথতে পেরেছে ব্যাক্তিগত অর্জনের কিছু ফুল দিয়ে। সেখানে সবচেয়ে সৌন্দর্যময় ফুলটি নিঃসন্দেহে নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিটি ছিল দেশের মাঠে তার প্রথম। একদিন পরই দেশের মাঠে তার সেঞ্চুরি এখন দুটি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে উপহার দিলেন এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি। মুমিনুলের হকের মৌ মৌ ঘ্রাণও ছড়িয়ে পড়েছে এ দিন।
প্রায় ২৬ মাস আর ২৬ ইনিংসের যন্ত্রণাময় অপক্ষোর পর অবেশেষে টেস্ট সেঞ্চুরির খরা কেটেছে এই সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ানের। এই মালায় জাকির হাসান ও লিটন কুমার দাসের উপস্থিতিও দৃশ্যমান আলাদা করে। তবে শতরানে যাওয়া হয়নি কারও। ৭১ রানে রান আউট হয়ে আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নেন জাকির। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলে ৬৬ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করেন লিটন। আফগানিস্তান শেষ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনারকে হারায় দ্রুতই। এরপর তাসকিন আহমেদের বল হেলেমেটে লাগায় মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি। দিন শেষে তাদের রান ২ উইকেটে ৪৫। টেস্ট আঙিনায় পা রাখার পর একটা সময় এভাবেই প্রতিপক্ষের সামনে নিত্য অসহায় হয়ে থাকতে হতো বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনেই অসহায় আত্মসমর্পণ করে তাকিয়ে থাকতে হতো প্রতিপক্ষের দিকে। এবার সেই স্বাদ বাংলাদেশ কিছুটা বুঝিয়ে দিল আফগানদের। ১ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে বাংলাদেশ শুরু করে দিন। আগের দিনের মতোই দাপুটে ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন জাকির ও শান্ত। আফগানিস্তানের কোনো বোলারই বিপাকে ফেলতে পারেননি দুই ব্যাটসম্যানকে। তখন জাকির নিজেই ডেকে আনেন বিপদ। তিন রানের চেষ্টায় আত্মঘাতী দৌড়ে হারান তিনি নিজের উইকেট।
১৭৩ রানের সেই জুটি ভাঙার পর আরেকটি বড় জুটি গড়ে তোলেন শান্ত ও মুমিনুল। লাঞ্চের আগেই শান্তর শতরান পূরণ হয় ১১৫ বলে। বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির আগের কীর্তি ছিল যার, সেই মুমিনুল গিয়ে অভিনন্দন জানান তার সঙ্গীকে। লাঞ্চ পর্যন্ত আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। বিরতির পর মুমিনুল ফিফটি পূরণ করেন ৬৭ বলে। আফগানরা একরকম হাল ছেড়ে দিয়েছেন এর বেশ আগেই। শরীরী ভাষাতেই ফুটে উঠছিল, স্রেফ বল করতে হয় বলেই করে যাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশের রানও বাড়ছিল তরতর করে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান, বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি চার মেরে শেষ পর্যন্ত শান্তর ইনিংস থামে ১২৪ রানে। মুশফিকুর রহিম উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে নেন দুই রান, পরের বলে ছক্কা মারেন স্লগ সুইপে। তৃতীয় বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হারান উইকেট।
এক ওভারে জোড়া উইকেটের পর আবার আফগান বোলারদের যন্ত্রণাময় সময় দেন মুমিনুল ও লিটন। এই দুজনের জুটিতে রান আসে ওয়ানডের গতিতে। ৯৫ রান নিয়ে চা বিরতিতে গিয়েছিলেন মুমিনুল। বিরতির পরপর ১২ চারে ১২তম সেঞ্চুরি করেন মুমিনুল ১২৩ বল খেলে। এর আগেই লিটন ফিফটি করে ফেলেছেন ৫৩ বলে। মুমিনুলের শতরানের পরও ইনিংস ঘোষণা না দিয়ে খেলা চালিয়ে যান লিটন। তাদের দুজনের ব্যাটে দ্রুত রানের খুব তাড়াও ছিল না। অবশেষে ৬৬১ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ছাড়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এর আগে সর্বোচ্চ ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েকে। রানের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বড় ধাক্কা খায় আফগানিস্তান।
শরিফুল ইসলামের ফুল লেংথ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ইব্রাহিম জাদরান। পরের ওভারে আবদুল মালিককে ফেরান তাসকিন। একটু পর তাসকিনের শর্ট বলে চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন শাহিদি। কিন্তু বল লাফায়নি প্রত্যাশিত উচ্চতায়, ছোবল দেয় সরাসরি হেলমেটে। মাঠেই পড়ে যান আফগান অধিনায়ক। একটু পর মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপরই কমে আসে আলো। বাড়তি সম্ভাব্য ৩০ মিনিটের ২৫ মিনিট খেলা তাই চালানো যায়নি। তবে ম্যাচ জয়ের পর্যাপ্ত সময় বাংলাদেশের এখনও আছে। মোটে তো শেষ হলো ৩দিন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৮২
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৮০ ওভারে ৪২৫/৪ (ডিক্লে.) (জয় ১৭, জাকির ৭১, শান্ত ১২৪, মুমিনুল ১২১*, মুশফিক ৮, লিটন ৬৬*; আহমাদজাই ১৩-১-৬১-০, মাসুদ ১২.৫-০-৮৩-০, হামজা ১৬.১-০-৯০-১, জানাত ৮-০-৪৮-০, জাহির ২৩-০-১১২-২, শাহিদি ৩-০-১৯-০, জামাল ২-০-৪-০, রহমত ২-০-৪-০)।
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৬৬২) ১১ ওভারে ৪৫/২ (জাদরান ০, মালিক ৫, রহমত ১০*, শাহিদি ১৩ আহত অবসর, জামাল ৫*; শরিফুল ৪-১-৬-১, তাসকিন ৪-০-২৮-১, তাইজুল ২-০-৬-০, মিরাজ ১-০-১-০)
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান