May 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 3rd, 2023, 9:49 pm

টাকার লোভে বাড়ছে সিজার ডেলিভারি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অর্থের লোভে রোগীকে সিজার ডেলিভারির দিকে এখন বেশি ঝুঁকছে চিকিৎসকরা। তুলনামুলকভাবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে অর্থের লোভে বেশি সিজার বাণিজ্য চলছে। ঢাকার বাইরে একটি ক্লিনিকে যে যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনা থাকার কথা, তার কিছুই নেই। শতকরা ৮০ ভাগেরই লাইসেন্স নেই। তবুও অনায়েশেই চলছে এসব কর্মকান্ড। স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে ব্যবসায়িক মানসিকতা ও অতি মুনাফা লাভের আশায় চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি দেশের জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা বলা যায়। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শিশুর অন্তত ৩ ভাগের ১ ভাগের ডেলিভারি হয় অস্ত্রোপচার করে বা সিজার সেকশনে। অস্ত্রোপচার করার কারণে পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হচ্ছে অনেক মায়ের। সিজারের নামে দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন অসংখ্য মা ও শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন দেশে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সিজার অপারেশন হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন একটা জনগোষ্ঠীতে ৫ শতাংশের কম এবং ১৫ শতাংশের বেশি সিজার হওয়া উচিত নয়। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে এ হার ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে হতে পারে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালেই সিজারের হার ৩৬ শতাংশ। সিজারের হারে এগিয়ে আছে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো। দেশের ৭০টি বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ এর মত শিশু জন্ম নেয়, যার অন্তত ৮৪ ভাগ সিজারের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে দুটি রিট আবেদন হয়। যার প্রেক্ষিতে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনসহ কর্মপরিকল্পনার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৩৩ শতাংশ বেড়েছিল এবং নরমাল ডেলিভারি ৩১ শতাংশ কমেছিল। যা সত্যিই উদ্বেগের। ২০২২ সালে সিজারে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ৮৪ শতাংশই হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। বাকি ১৪ শতাংশ হয়েছে সরকারি হাসপাতালে আর ২ শতাংশ হয় এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সম্প্রতি মাহবুবা রহমান আঁখি কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে রাজধানীর গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসেন। ফেসবুকে হাসপাতালের গাইন চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার নরমাল ডেলিভারি বিষয়ক ভিডিও দেখেই মূলত তিনি ঢাকায় আসেন। আঁখির পরিবার জানান, ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার ছিলেন না। সেসময় ড. সংযুক্তা সাহা দেশের বাহিরে ছিলেন।

চিকিৎসক না থাকায় তার অধীনেই ভর্তি এবং ডেলিভারির চেষ্টা চালানো হয় এবং পরবর্তীতে স্বাভাবিক প্রসব না করতে পেরে রোগীকে সিজার করে বাচ্চা বের করা হয়। সিজারের পর ওইদিনই বাচ্চাটি মারা যায়। নবজাতক হারানোর পর মা মাহবুবা রহমান আঁখিও নিহত হন। এই ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ধানম-ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে ডা. সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে ধানম-ি থানা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। কিছু ভুক্তভুগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে গিয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হন তারা। সামান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য দিতে হয় ঘুষ। অনেক চিকিৎসকের ব্যবহার এতটাই খারাপ যে, তাদের ব্যবহারে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়। সরকারি হাসপাতালে গিয়ে, অধিকাংশ সময় মিনতি করেও ডাক্তারের সঙ্গে অল্প সময় কথা বলা যায় না। দুর্ব্যবহার এবং নানান সমস্যা সহ্য করেও যারা সন্তান প্রসবের জন্য সরকারি হাসপাতালে যান, তারাও সিজারিয়ান ডেলিভারি থেকে রক্ষা পান না।

অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রোগীকে সিজার করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সিজার ডেলিভারি করার অনেকগুলো কারণ থাকে। ডাক্তার এবং রোগী যে কোন এক পক্ষকে দোষ দিলে হবেনা। লেবার ব্যাথা সহ্য করতে না পাড়ায় রোগীর পরিবার যেমন শ্বাশুড়ি বা তার স্বামী ডাক্তার বা চিকিৎসকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন সিজারের জন্য। এ ধরনের পরিস্থিতি সরকারি বা বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনাতেই হতে পারে। আর এটি যদি বেসরকারি সেট আপে হয় তাহলে আর চিকিৎসকরা দেরি করতে চান না।

কারণ দেরি করার পর যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে রোগীর লোকেরা বলবে আমরা তো আগেই করতে বলেছিলাম। ড. বিনায়ক সেন জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নেওয়া হচ্ছে রোগীদের। বাড়িতে ডেলিভারি এখন আর হয় না। বেসরকারি হাসপাতালে গেলেই সাধারণত বেশির ভাগই রোগীদের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে শারীরিকভাবে নানা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন রোগীরা একই সাথে অর্থনৈতিকভাবেও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মায়েদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। এ বিষয়ে গবেষণা করে দেখতে হবে। কেন অপ্রয়োজনীয় সিজার বাড়ছে।