November 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, July 30th, 2021, 7:54 pm

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের

ফাইল ছবি

জেলা প্রতিনিধি :

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে হালকা ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরায়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের, রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা। বিশেষ করে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলার অধিকাংশ চিংড়ি ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার সমস্ত নিচু এলাকাও এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং একইসাথে বৃষ্টি না কমায় জলাবদ্ধতার কবলে থাকা এলাকাগুলোতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। পথঘাট, ডোবা, নালা পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের সুলতানপুর, কামালনগর, ইটাগাছা, খড়িবিলা, বদ্দিপুর কলোনী, শহরতলীর বকচরা, কাশেমপুর, সরকারপাড়া, আমতলার মোড় পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের কোন পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি শহরের নিম্নাঞ্চলে বাসবাসকারীদের বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি টানতে পারছে না। সদ্য খননকৃত খালের দু’পাড়ের মাটি ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে গত ২৭ জুলাই বিকেল থেকে বৃহষ্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিল সহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানি থই থই করছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলির পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কাঁচা ঘরবাড়ি রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। সবজি ক্ষেত গুলি পানিতে টইটুম্বুর করছে। মানুষের যাতায়াতেও ভোগান্তি বেড়েছে। ঝাউডাঙ্গা, ঘোনা, বৈকারী ও হাড়দ্দহ এলাকায় পানিতে থই থই করছে। আমন ধানের বীজতলা ও নতুন লাগানো ধান পানিতে ডুবে গেছে। শহরের সুলতানপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে বাড়িতে এখন হাঁটু পানি। এভাবে বৃষ্টি হলে ঘরে পানি উঠে যাবে। পানিতে ডুবে আছে চলাচলে রাস্তা। ড্রেন দিয়ে পানি সরছে না। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই ৬ ঘষ্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে আগামী আরো কয়েকদিন ভারি থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দর মো. বিপ্লব জানান, পার্শবর্তী বিলে অবৈধভাবে ঘের তৈরি হওয়ায় এখন পানি সরতে পারছে না। খাল গুলো প্রভাবশালীদের দখলে। সেখানে তারা মাছ চাষ করে। এই পানি এখন যাবে কোথায়? শ্যামনগরের আটুলিয়া গ্রামের চিংড়ি ঘের মালিক মো সোহেল জানান, টানা বৃষ্টিতে তার ৪০০ বিঘার চিংড়ি ঘেরসহ এই এলাকার প্রায় সব ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ওয়াপদা গেটের মুখ বন্ধ থাকায় পানি সরতে পারছে না। এতে চিংড়ি চাষের পিক মৌসুমে ঘের প্লাবিত হওয়ায় চাষীরা দারুন ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। একই অবস্থা জেলার অন্যসব এলাকার ঘের মালিকদের। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আলীনুর খান বাবুল জানান, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। গত দুই দিনের টানা বর্ষনে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুটিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিস্তির্ন এলাকা। তিনি আরো জানান, গুটি কয়েক লোক পৌরসভার মধ্যে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের করার কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।