March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 2nd, 2022, 6:44 pm

টার্গেট যখন মোটর সাইকেল

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

গত ১৫ দিনে বেড়েছে চোরের উপদ্রব। কোনোভাবেই চোরদের দৌরাত্ম থামানো যাচ্ছে না। চোরদের মুল টার্গেট মোটর সাইকেল। এমনকি মোটর সাইকেল চুরি হয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় আছেন বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট, সহকারি পুলিশ পরিদর্শক ও সাংবাদিক। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার দুটি উপজেলা কুলাউড়া ও কমলগঞ্জে। এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ করা হলেও কোনোভাবেই চোরের উপদ্রব না থামায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তা বলছেন, জিডি করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ লোক দেখানো। এতে কোন কাজ হয় না। চুরির বিষয়ে মামলা না নিলে সুরাহা পাওয়া মুশকিল হবে মোটরসাইকেল চুরি আরো বাড়বে।

কুলাউড়ায় সাপ্তাহিক সীমান্তের ডাকের সম্পাদক সঞ্জয় দেবনাথ জানান গত সোমবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকার মাগুরাস্থ তার ভগ্নিপতির বাসা থেকে তার ব্যবহৃত ডিসকোভার ১২৫ সিসির ওই মোটরসাইকেলটি চুরি হয়।

তিনি জানান, সোমবার বিকেলে তিনি পৌর এলাকার মাগুরা আবাসিক এলাকায় তার ভগ্নিপতি বীরেন্দ্র দেবনাথের বাসায় বেড়াতে যান। সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে শহরে আসতে চাইলে তার মোটরসাইকেল আর খোঁজে পাওয়া যায়নি। দ্রুত তিনি কুলাউড়া থানার ওসিকে বিষয়টি জানালে ওসি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান।

কুলাউড়া থানার এসআই বিদ্যুৎ পুরকায়স্থ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ চোর শনাক্ত করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এনজিও সংস্থা গ্রাম উন্নয়ন কাযক্রম এর ম্যানেজার অবিনয় কুমার পাল বলেন, আমাদের অফিসের ৬টা মোটর সাইকেল আছে। আমরা আমাদের কুলাউড়া অফিসের গেরেজে সবসময় রাখি। গত রোববার বিকেলে গেরেজ গিয়ে দেখি আমাদের দুটি সাইকেল নেই। পুলিশকেউ জানিয়েছি। কিন্তু এখন পযন্ত কোন সুরাহা হয়নি। বড় আতংকে আছি। অন্য মোটর সাইকেলগুলো যদি আবার চুরি হয়ে যায়।

কুলাউড়া মাগুরার বাসিন্দা পাবেল বক্স জানান, গত সোমবার রাতে কুলাউড়া শহরের দক্ষিন মাগুরা থেকে আরেকটি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। যার সিরিয়াল নাম্বার-হ/১৪-৯৩৭৯।

কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোক্তাদির হোসেন বলেন, আমরা এখন অনেক ভয়ে থাকি কখন সবকিছু চুরি হয়ে যায়। অতি দ্রুত এই সংঘবদ্ধ চোরদের গ্রেফতার করা না হলে চুরি থামবে না। তার অভিযোগ, চুরির পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এরপর আর খোঁজ থাকে না। সাধারণ মানুষ হিসেবে আর কী করার আছে আমাদের? নিজের চুরি যাওয়া মোটর সাইকেল সন্ধান করতে করতে এক সময় থেমে যেতে হয়।

কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত সপ্তাহে শমশেরনগর বাজারের একটি বাসা থেকে বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট জহুরুল ইসলামের একটি পালসার সাইকেল চুরি হয়েছে। এর পাশের বাসার বারান্দা থেকে আরও একটি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে। শমশেরনগর লামাবাজারস্থ এনজিও সংস্থা কারিতাস এর অফিসের বারান্দা থেকে ডিসকভার নামে একটি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে। মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় দু’টি জিডি দায়ের করা হয়েছে। সাইকেল উদ্ধার ও চুর চক্রকে আটকের জন্য জোর তৎপরতা চলছে।

কুলাউড়া থানার এসআই শাহ আলম বলেন, আমার বাসা কমলগঞ্জ উপজেলার সমসেরনগর এলাকায়। মোটরসাইকেলটা গেরেজে রেখে শুধু জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। এসে দেখি মোটরসাইকেল নাই। কমলগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেছি।

তবে কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নুরুল মুহায়মিন মিল্টন বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলায় গত ১৫দিনে মোট ৯টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। কিন্তু পুলিশের উদ্ধারে আস্থা না থাকায় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যাওয়ায় অনেকে অভিযোগ পযন্ত দেননি।

পুলিশের সঠিক তদারকি না থাকায় চুরি করে পার পেয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর চক্র। মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। এই সংঘবদ্ধ চোরদের কাছ থেকে রক্ষা পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, চুরি হওয়ার পর থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এখানে পুলিশের ভূমিকা নীরব। এর পিছনে যদি কিছু টাকা খরচ করি সেটাও লোকসান হয়ে যাবে। এ কারণে আর সামনে বাড়িনি।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুদর্শন কুমার রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে যে কয়টা অভিযোগ এসেছে সেসব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি মোটরসাইকেল চুরির সাথে জড়িত তারা জেলা শহরের বাইরের চক্র। এই বিষয় নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে কিছু তথ্য পেয়েছি। আরো কিছু তথ্যের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’