April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 18th, 2021, 9:02 pm

টিকার ব্যয় প্রকাশ সমীচীন হবে না: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার খরচ প্রকাশ করা হলেও সংসদে এ খাতের ব্যয় প্রকাশ করেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রীর ভাষ্য, নন-ক্লোজার এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা ‘সমীচীন হবে না’। তবে এ পর্যন্ত দেশে কী পরিমাণ টিকা সংগ্রহ হয়েছে সেটা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ দাবি করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। আবুল কালাম আজাদ তার প্রশ্নে কত সংখ্যক টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এতে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা জানতে চান। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। এর মধ্যে চীন থেকে ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ সিনোফার্মা, ৭ কোটি ৫১ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক, ভারত থেকে ৩ কোটি কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সের আওতায় ২ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার ডোজ সিনোফার্মার টিকা সংগ্রহ হয়েছে। তিনি বলেন, চীন, ভারত ও কোভ্যাক্স হতে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতার নিশ্চিত করে এসব ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সিসিজিপি (সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি) ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে টিকা কেনা হয়েছে। নন-ক্লোজার এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না। এর আগে গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনা চিকিৎসার ব্যয় জানানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়- এক কোটি এক লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে (ওই সময় পর্যন্ত)। প্রতি ডোজ ৩ হাজার টাকা হিসেবে মোট ৩ হাজার ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য মোট ২৯ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের সংস্থান হয়েছে। এ পর্যন্ত (১৩ নভেম্বর) ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৪ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫ হাজার ১৯০ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পুষ্টিহীনতা বিষয়ে সার্বজনীন (সব বয়সের) মানুষের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে এ ক্ষেত্রে সাফল্য রয়েছে। বিডিএইচএসের (বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ) পরিসংখ্যান মতে, পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে একটি চিত্র তুলে ধরেন তিনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খর্বাকৃতির হার এসডিজি (২০৩০) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ১২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা থাকলেও ২০১৭-১৮ সালে তা ৩১ শতাংশ; ২০০৭ সালে যা ছিল ৪৩ শতাংশ। কৃশকায় ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা থাকলেও তা রয়েছে ৮ শতাংশ; যা ছিল ১৭ শতাংশ। কম ওজনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশের নিচে নামানোর কথা রয়েছে। ২০০১৮-১৯ সালে ছিল ২২ শতাংশ; ২০০৭ সালে যা ছিল ৪১ শতাংশ। অতি ওজন ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৭-১৮ সালে ২ শতাংশ; ২০০৭ সালে যা ছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ। মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের অপুষ্টিজনিত কম ওজন ২০১৭-১৮ সালে ১২ শতাংশ; ২০০৭ সালে ছিল ৩০ শতাংশ। অতি ওজন ৩২ শতাংশ; যা ছিল ১২ শতাংশ। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের কম ওজনের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি অতি ওজনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। ময়মনসিংহ-১১ আসনের এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রি প্রতিরোধে কঠোর সরকার। আর নকল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে সরকার নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোবাইল কোর্টে এক হাজার ৭১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৪৬টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে হোমিও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ১৭টি, হার্বাল ওষুধ উৎপাদনকারী ৪টি, অ্যালোপ্যাথিক ৫টি, ইউনানী ৬টি এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪টি। একই সময়ে ১৪টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়। নুরুন্নবী চৌধুরীর (ভোলা-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ২০২১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত শনাক্তকৃত লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকানের সংখ্যা ১২ হাজার ৫৯২টি। লাইসেন্সবিহীন দোকান শনাক্ত করা এবং দোকানের অনুকূলে লাইসেন্স প্রদান চলমান প্রক্রিয়া রয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, ৫৫টি জেলা ও আটটি বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে সারাদেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে ওষুধের দোকান পরিদর্শন করেন। লাইসেন্সবিহীন দোকান শনাক্ত হলে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে লাইসেন্সবিহীন দোকানের মালিক নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে লাইসেন্স গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বৈধ ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকানের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যক্রম চলমান। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ও জরিমানা করা হয়। এছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেও মামলা করা হয়। মো. হাবিবর রহমানের (বগুড়া-৫) এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে মাঠপর্যায়ে সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকরা তার ইউনিয়নে প্রতি মাসে আটটি স্যাটেলাইট ক্লিনিক আয়োজনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকেন। যেসব কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে ওইসব ইউনিয়নে প্রতি মাসে চারটি স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনা করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের পদ শূন্য থাকার কারণে কেনো কোনো ইউনিয়নে স্যাটেলাইট ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ইউনিয়নগুলোতে স্যাটেলাইট ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।