March 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 14th, 2021, 9:27 pm

ট্রিপল মার্ডারঃ নেপথ্যে কেবল পরকীয়াই!

জেলা প্রতিনিধি :

কুষ্টিয়ায় স্বামীর গুলিতে স্ত্রী,পুত্র ও স্ত্রীর প্রেমিকা নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
রোববার (১৩ জুন) রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা এই মামলার বাদি হন নিহত শাকিলের বাবা। একমাত্র আসামি পুলিশের এএসআই সৌমেন রায়। হত্যাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে দুটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুন) দিনের কোনো একসময় ঘাতক পুলিশ কর্মকর্তাাকে আদালতে আনা হবে বলে জানা গেছে।
রোববার সকাল ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড়ে এই লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যেই ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার পর তা নিজ নিজ বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। লাশ তিনটির ময়নাতদন্ত করেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার।
তাপস কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, তিনজনকে দুটি করে ছয়টি গুলি করা হয়েছে। প্রত্যেকের মাথায় কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। প্রথমে শাকিল খানের ময়নাতদন্ত করা হয়। তার মাথার বাম পাশে গুলি করা হয়েছে। এ ছাড়া তার ডান পায়ের ঊরুতে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এরপর আসমা খাতুনের ময়নাতদন্ত করা হয়। আসমার মাথা ও গলায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। সবশেষে শিশু রবিনের (৬) ময়নাতদন্ত করা হয়। রবিনের মাথায় ও পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে কারোর দেহেই গুলি পাওয়া যায়নি। গুলিগুলো শরীর ভেদ করে বাইরে চলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রবিনকে দৌড়ে পালানোর সময় পেছন থেকে পিঠে গুলি করা হয়। এরপর পড়ে গেলে তার মাথায় গুলি করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনটি হত্যাকান্ডে সৌমেন ১১ রাউন্ড গুলি খরচ করেছেন। তার কাছ থেকে একটি গুলি ও একটি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। সৌমেন রোববার ভোরে ফুলতলা থানা থেকে ওয়ারেন্ট আসামি ধরার কথা বলে দুটি কার্তুজসহ বের হয়ে কুষ্টিয়ায় আসেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
এদিকে কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় আটক এএসআই সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার বিকেলে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় খুলনা রেঞ্জ ও খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা যায়। খুলনা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় গঠিত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) তানভীর আহমেদ। অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) মো. খায়রুল আলম ও জেলা বিশেষ শাখার ডিআইও-১ শেখ মাসুদুর রহমান। কমিটি সাত কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এ ছাড়া খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদকে। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন ও কুষ্টিয়া ডিআইও-১ ফয়সাল হোসেন।
রোববার বিকেল পরিদর্শনকালে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (এডমিন) এ কে এম নাহিদুল ইসলাম জানান, সৌমেন রায়কে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করবে। দুই কার্য দিবসে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মাহবুব রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা জানার পর সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোববার রাতে এ শাকিলের পিতা মেজবার রহমান কুষ্টিয়া মডেল থানায় সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করে মামলার এজাহার উল্লেখ করেছেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানান, একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে মামলার বাদি নিহত শাকিলের পিতা। অভিযুক্ত সৌমেনের গ্রামের বাড়ি মাগুরায়। সেখানে তার পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিহত আসমা খাতুনের সঙ্গে সৌমেনের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি তার পরিবার বা শ্বশুরবাড়ির পরিবারের কেউ জানত না।
এএসআই সৌমেন রায়ের ভাই জানান, সৌমেন পারিবারিকভাবে ২০০৫ সালে পাশের গ্রামে বিয়ে করেন। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি খুলনায় থাকেন। ওই স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারীর সাথে সৌমেনের বিয়ের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি আমরা খবরে দেখেই প্রথম জেনেছি। এমনকি বিষয়টি সে তার স্ত্রীকেও জানায়নি। আমরা সবাই আজ প্রথম জানলাম। আমাদের ধারণা কুষ্টিয়ায় কর্মরত অবস্থায় হয়তো আসমার সাথে সম্পর্কে জড়ায় সে।
তিনি জানান, অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সৌমেনের হাত ধরে তাদের দরিদ্র পরিবারটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সৌমেনের পরিবারের লোকজনের থেকে আরো জানা যায়, তার বাবা অনেক বছর আগে মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সৌমেন মেজ। পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর ২০০৫ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন তিনি। ওই পরিবারে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া একটি মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। সুখের সংসার ছিল সৌমেনের। তবে দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না তাদের।
সৌমেন ২০০৪ সালে পুলিশ কনষ্টাবল পদে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হয়ে কুষ্টিয়ায় পোষ্টিং নেন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী, মিরপুর ও ইবি থানাধীন বিভিন্ন ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করেন।
কুমারখালী থানায় থাকাকালীন একটি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আসমা থানায় এলে সেখান থেকেই পরিচয় এবং পরে তা পরিণয়ে রূপ নেয়। এদিকে সৌমেন কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় বদলির পর থেকেই আসমার সাথে সৌমেনের মনমালিন্য চলছিল। এরই মাঝে শাকিলের সাথে পরিচয় আর বন্ধুত্বও বিষয়টি নিয়ে চটে যান সৌমেন।
এদিকে আসমার এলাকার মানুষেরা জানান, সৌমেনের সাথে বিয়ের আগে আরো দুটি বিয়ে হয়। নিহত শিশু রবিন তার দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের সন্তান।
কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নিশিকান্ত জানান, রোববার রাতে নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম বাদি হয়ে মেয়ে ও নাতি ছেলে হত্যার দায়ে পুলিশ সদস্য এ এস আই সৌমেন রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে এজাহার দিয়েছেন। এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।