অনলাইন ডেস্ক :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিতব্য আলোচিত ছবি ‘মুজিব’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে সমালোচনার ঝড়। গত বৃহস্পতিবার প্যারিসের কান উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম থেকে প্রকাশ হয়েছে ছবিটির ট্রেলার। এরপর থেকেই শুরু হলো নানা সমালোচনা। গেল তিন দিন বিষয়টি ছিলো একপক্ষীয়। আত্মপক্ষ সমর্থনে কথা বলেননি কেউ। অবশেষে দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে এই সমালোচনার প্রতিক্রিয়া জানালেন বলিউডের জ্যেষ্ঠ নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। চলমান সমালোচনায় তিনি বিস্ময় ও বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘৯০ সেকেন্ডের একটি ট্রেলার দেখে পুরো সিনেমা নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন না কেউ। আপনি শুধু ট্রেলার নিয়েই মন্তব্য করতে পারেন।’ যদিও ট্রেলারটির দৈর্ঘ্য এক মিনিট ৩৮ সেকেন্ড! এবং সমালোচনার পুরোটাই মূলত ট্রেলারটিকে ঘিরে। দ্য টেলিগ্রাফের মন্তব্য, বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে পর্দায় দুর্বল উপস্থাপনা দেখে হতাশ হয়েছেন দেশটির সিনেমা সংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে বলছেন, বঙ্গবন্ধু চরিত্রে আরিফিন শুভর কণ্ঠ, ভিএফএক্স, ইতিহাসের সঙ্গে ট্রেলারের দৃশ্য না মেলার মতো অনেক অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এসব প্রসঙ্গে ২২ মে নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘সিনেমাটি নিয়ে নানা মন্তব্য এসেছে বলে আমি শুনেছি। তারা কেন বিরক্ত তা অনুমান করা আমার পক্ষে খুব কঠিন। আজ সোমবার আমি অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখবো। তবে কানে ট্রেলারের উপস্থাপনা খুব ভালো ছিল। সেখানে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ও তাদের দূত উপস্থিত ছিলেন। কী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে তা আমি আরও ভালোভাবে জানতে চাই।’ বেনেগাল আরও বলেন, ‘‘সত্যি বলতে এটির মাধ্যমে কোনও বিতর্কের কথা ভাবতে পারিনি। ট্রেলারে তাকে (বঙ্গবন্ধু) একজন ‘নিবেদিত পরিবারের মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে তার কথোপকথনের কিছু দৃশ্যও রয়েছে। দেখিয়েছি শত ঝড়েও মুজিব তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। তাকে কারাগারে বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় ছাড়া বাকি পুরোটা সময় পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। এই কারণেই আমি জানতে চাই, আসলে মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াটা কী নিয়ে।’’ ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে শ্যাম বেনেগালের কাজের অভিজ্ঞতা এই প্রথম নয়। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও সত্যজিৎ রায়কে নিয়েও তিনি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। হয়েছেন প্রশংসিত। মূলত সেই ধারাবাহিকতায় ‘মুজিব’ ছবিটির দায়িত্বটাও তার কাঁধে বর্তায় দুই দেশের (ভারত-বাংলাদেশ) পক্ষ থেকে। ‘মুজিব- দ্য মেকিং অব আ ন্যাশন’ সিনেমার সব অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই শ্যাম বেনেগাল নিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে, কারণ তিনি চেয়েছেন ভাষা ও আবেগ যেন ঠিক থাকে। দ্য টেলিগ্রাফকে আক্ষেপ করে নির্মাতা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বাংলার সঙ্গে বাংলাদেশের বাংলার উচ্চারণের পার্থক্য রয়েছে, এটা নিয়ে তারা (বাংলাদেশিরা) গর্ব অনুভব করে। সিনেমাতে সেই ছন্দটাই রেখেছি আমি। এ কারণে আমি শুধু বাংলাদেশের অভিনেতাদের নিয়েছিলাম; কারণ তারা মুজিবকে অনেক কাছ থেকে অনুভব করবে।’ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা এবং ভারত সরকারের এনএফডিসির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটির ফার্স্টলুক প্রকাশিত হয় গত ১৪ এপ্রিল। এরপর উন্মুক্ত হয়েছে একটি পোস্টার। অবশেষে কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে প্রকাশ হয় ট্রেলার। জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাবে ছবিটি। ‘মুজিব: মেকিং অব অ্যা নেশন’ ছবির প্রধান চরিত্রে আরিফিন শুভ এবং শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের তরুণী বয়সের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। তরুণী শেখ হাসিনা চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া এবং কিশোরী শেখ হাসিনার ভূমিকায় আছেন ওয়ানিয়া জারিন আনভিতা। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের (রেনু) কিশোরী বয়সের চরিত্রে দেখা যাবে প্রার্থনা দীঘিকে। শেখ রেহানার দুটি ভিন্ন বয়সের চরিত্রে থাকছেন সাবিলা নূর ও সামন্ত রহমান। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী ও খায়রুল আলম সবুজ (বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান), দিলারা জামান ও সঙ্গীতা চৌধুরী (বঙ্গবন্ধুর মা সাহেরা খাতুন), শরীফ সিরাজ (শেখ জামাল), নাজিবা বাশার (সুলতানা কামাল)। জাতীয় চার নেতার চরিত্রে আছেন দেওয়ান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), রিয়াজ (তাজউদ্দীন আহমদ), সমু চৌধুরী (কামারুজ্জামান) ও খলিলুর রহমান কাদেরী (মনসুর আলী)। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), তৌকীর আহমেদ (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শামসুল হক), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ.কে. ফজলুল হক), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), সাব্বির হোসেন (তোফায়েল আহমেদ), তুষার খান (তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া), খন্দকার হাফিজ (মেজর জেনারেল ওসমানী), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান), জায়েদ খান (জেনারেল টিক্কা খান), ফজলুর রহমান বাবু (খন্দকার মোশতাক আহমেদ) ও এলিনা শাম্মী (খালেদা জিয়া)। এ ছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে দেখা যাবে শতাব্দী ওয়াদুদ, রোকেয়া প্রাচী, আবুল কালাম আজাদ, আশিউল ইসলাম, হাসান দ্বীপ ও সুদীপ সারাঙ্গীকে। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে ছবিটির চিত্রায়ণ শুরু হয়।
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ