দ্রুত নগরায়ণের কারণে কমছে কৃষি জমি। ফলে ইচ্ছে সত্ত্বেও অনেকে বাগান কিংবা সবজি চাষ করতে পারেন না। তবে আশার কথা হচ্ছে মাটি ছাড়াই অভিনব পদ্ধতিতে মাটির সংস্পর্শ ছাড়াই বিষমুক্ত লেটুসসহ শাক-সবিজ ও ফল চাষ হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে।
২০১৭ সালে ৬০ শতক জমি নিয়ে পরীক্ষামূলক মাটি ছাড়া এই বিশেষ পদ্ধতিতে খলিশাখুড়ি গ্রামের ৬ বন্ধু যৌথভাবে লেটুসসহ শাক-সবজি ও ফল চাষ শুরু করেন । অভিনব এই পদ্ধতিতে আবাদ করে সফলও হয়েছেন তারা। ২০১৯ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে তাদের খামারে বিদেশি সবজি লেটুসসহ দেশীয় ফল ও শাক-সবজি।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে এই ছয়জন উদ্যোক্তা হলেন জাফর ইবনে হাসান, নাহিদ হোসেন, আল আমিন, সাবাহ্ সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহরিয়ার।
গ্রীন হাউসের মতো এ বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিরাপদ ও বিষমুক্ত এই সব শাক-সবজি সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকার নামী-দামি রেস্টুরেন্ট গুলোতে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে আরও বেশ কয়েকটি খামার গড়তে চান উদ্যোক্তারা।
সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খলিশাখুড়ি গ্রামে সবজি খামারে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে ১৬টি খাদ্য উপাদান মিশ্রিত পানি স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মাধ্যমে সঞ্চালন করে মাটি ছাড়া চাষাবাদ চলছে। আর পাইপ ছিদ্র করে বেড়ে উঠা লাগোনো গাছে স্বল্পপরিসরে চাষ করা হচ্ছে শসা, লাউ, মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজ, করলাসহ আরও কয়েক ধরনের সবজি।
একটি পানির পাম্প দিয়ে দিনে দু’বার মাটির বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত পানি আদান প্রদান করা হয়।
সবজির খামারের নিয়মিত শ্রমিকেরা বলেন, ‘অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা খামারে কাজ করছি। এখানে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদন করা হয়। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে মালিকের কথা অনুযায়ী কাজ করি আমরা।’
উদ্যোক্তা নাহিদ হোসেন বলেন, ‘হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে অনেক বায়োসিকিউরিটি অনুশীলন করা হয়। সে জন্য খেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই। তাছাড়া কিছু ডিভাইস ব্যবহারের ফলে বন্যপ্রাণী ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে আমরা সক্ষম। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে লেটুসের সঙ্গে টমোটো, শশা, মরিচ, তরমুজ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
হাইড্রোপনিকের আরেক উদ্যোক্তা আল আমিন বলেন, আমরা লেটুসকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি, কারণ এর চাহিদা সারা বছর। তবে উৎপাদনে সফলতা আসলেও খরচের তুলনায় দাম সেই রকম পাওয়া যায় না। পরিকল্পনা রয়েছে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করার। কিন্তু সেই রকম যোগাযোগ পাচ্ছি না। বর্তমানে ঢাকায় বাজাবজাত করছি। তবে আশানুরুপ সুফল পাচ্ছিনা।
তিনি জানান, এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গাতে বেশি পরিমাণ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। যার গুণগত মান অনেক বেশি। তবে এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ বেশি। এ পদ্ধতিতে বীজ বোপণ থেকে লেটুসপাতা উৎপাদন পর্যন্ত সময় লাগে ৩৫-৩৮ দিন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, সদর উপজেলার ভূল্লী এলাকায় নিজস্ব উদ্দ্যোগে বৃহৎ আকারে বাণিজ্যিক ভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে হারে আবাদি জমি কমছে তাতে অনেকে চাইলেই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে সারা বছর সবজি- ফলমূল উৎপাদন করতে পারেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি