নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারণা বাড়ছে। নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায়ই ডিজিটাল অপরাধীরা ধরা পড়লেও অপরাধের মাত্রা কমছে না। প্রতারকচক্র ডিজিটাল মাধ্যম নানাভাবে ব্যবহার করছে। নানা কৌশলে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ চলছে। ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ডিজিটাল প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রেমের ফাঁদ পেতে ফেসবুকে বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি ফেসবুকে ই-কমার্স পেজ খুলে বিশাল ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভোক্তার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া নিত্যদিনই জমি লিজ, প্লট বিক্রি, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, এমএলএস ব্যবসার আড়ালে প্রতারণা, পে-অর্ডার প্রতারণা, অনলাইন প্রতারণাসহ নানা রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সচেতনতাই হচ্ছে ওই প্রতারকচক্রের হাত থেকে রক্ষা একমাত্র উপায়।
সূত্র জানায়, শুধুমাত্র রাজধানীতেই ৫ শতাধিক প্রতারক সক্রিয় রয়েছে। আর র্যাবের হাতেই ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি প্রতারক গ্রেপ্তার হয়েছে। তার মধ্যে ডিজিটাল প্রতারকই বেশি। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধের জন্য প্রতিনিয়তই মামলা হচ্ছে। আসামিও গ্রেপ্তার হচ্ছে। কিন্তু তারপরও বেপরোয়া সাইবার প্রতারকচক্র। অপরাধীরা জেনেশুনে টাকা আয়ের লক্ষ্যে ডিটিজাল মাধ্যমে অপরাধ করছে। আর তাদের শিকার হচ্ছে সাইবার স্পেস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞরা। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) জরিপে তথ্যানুযায়ী সাইবার অপরাধের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। যার হার ২৩.৭৯ শতাংশ। ২০২১ সালের ওই হার ছিল ২৮.৩১ শতাংশ, যা এবারের তুলনায় ৪.৫২ শতাংশ বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ছিল ১৬.৩১ শতাংশ। কিন্তু এ বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮.৬৭ শতাংশ। যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি/ভিডিও (পর্নোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানির পরিমাণ গত বছর ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ থাকলেও এবারের তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি ডিজিটাল প্রতারক চক্রের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা প্রবাসীদের টার্গেট করে ইমো আইডি হ্যাক করে প্রতারণা করতো। আবার আরেকটি গ্রুপের কাছ থেকে তারা হ্যাকিংও শিখে এসেছে। প্রতারক চক্র ডিটিজাল মাধ্যমে লোভের ফাঁদ তৈরি করে রাখছে। তাদের খপ্পর থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। যিনিই অনলাইনে লোভের ফাঁদে পা দেবে তিনিই ধরা খাবে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ও অর্থ দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন এবং নিজের পিন, ওটিপি নম্বর কাউকে দেয়া যাবে না। তাছাড়া কেউ প্রতারকচক্রের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো জরুরি। চাকরির নামে, অনলাইনে ব্যবসা করার নামে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা হচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল প্রতারণার শিকার মানুষের ৭০ ভাগই মামলা করতে চায় না। আবার মামলার পর গ্রেপ্তার করা হলেও দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে চক্রের সদস্যরা।
এদিকে এ প্রসঙ্গে অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, ডিজিটাল প্রতারকরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে প্রতারণার টোপ দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত প্রতারকচক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। কিন্তু যতোটা গ্রেপ্তার হচ্ছে তার অনেক গুণ বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। তাদের খপ্পর থেকে মুক্ত থাকতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম