নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি মানুষের চলাচল করে। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা। এতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ঢাকা শহরের যানজট। সারাদেশে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও হাতের ইশারায় চলছে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা। সমন্বয়হীনতা আর প্রক্রিয়ার গলদের কারণে কাজে আসছে না রাজধানীর কোটি কোটি টাকার স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা। এছাড়া, রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গাড়ি ঢাকার সড়কে চলছে। এতে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। আধ ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। রমজানের শুরু থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী। অনেক রুটেই যাত্রীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ৩/৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু না থাকায় অসহনীয় যানজটসহ সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং রাজধানীতে চলাচলকারীরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, “২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে। সে মোতাবেক রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের কথা বলা হচ্ছিল এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। সরকারের প্রথম মেয়াদের শুরুতে, ২০০৯ সালে রাজধানীর ৭০টি স্থানে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। এরপর ২০১৪ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫টি ট্রাফিক সিগন্যাল ইন্টারসেকশনে টাইমার কাউন্টডাউন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরীক্ষামূলক ৩৫টি স্থানে বসানোও হয়। সেসব এখন কেবলই স্মৃতি, ব্যর্থতার ইতিহাস। রাজধানী ঢাকার সড়ক সংযোগগুলোতে মোট ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ১১০টি। দুই একটি বাদে বাকি সব চলছে হাতের ইশারায়। সড়কে আরও আছে ৫৫০টির মতো স্থান, যেখানে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা হাত নেড়ে গাড়ি চলা ও থামার সংকেত দেন। সব মিলিয়ে এই সাড়ে ছয় শতাধিক স্থানে দায়িত্ব পালন করেন ৩ হাজার ৮শ’ ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। রাজধানীতে চলাচলকারী কয়েকজন যানবাহনের চালক এবং নিয়মিত চলাচলকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় গাড়ি চালাতে চালাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই সিগন্যাল বাতির দিকে তেমন খেয়াল থাকে না। তবে বাতি থাকলে দূর থেকে দেখতে পারলে আগে থেকে সতর্ক থাকা যেত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু না হওয়া পেছনে দুই সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের বিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে। সিগন্যাল বাতিগুলো স্থাপনের পর সেগুলো সিটি করপোরেশন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে বাতিগুলো হস্তান্তর করে। কিন্তু, পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা পুলিশের হাতে নেই বলে জানা গেছে। তাই যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সিগন্যাল বাতিগুলো ডিএমপির পক্ষ থেকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার না করায় নষ্ট হচ্ছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ডিএমপি শুধু ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। বাকি সব সিটি কর্পোরেশনের হাতে। একটি বাতি নষ্ট হলেও তাদের শরণাপন্ন হতে হয়। ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে ৩৪, পূর্ব বিভাগে ১২, উত্তরে ১১ ও পশ্চিমে ১৩টি ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর এসব বাতি চালু করা হলেও অল্প দিন যেতেই তা শিথিল হয়ে যায়। পরে একে একে বিকল হয়ে পড়ে বাতিগুলো। পুলিশ ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণে পৃথক বিভাগ গঠনের জন্য কাজ করছে বলেও জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার তিনটি পার্টি হয়েছে। একটি ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয়টি এডুকেশন এবং তৃতীয়টি এনফোর্সমেন্ট। আমরা এনফোর্সমেন্টটা দেখি। এদিকে, যানজট নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমজানের শুরুতে ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়। তবে এতে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, যানজট পরিস্থিতি ততই প্রকট আকার ধারণ করছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার ফলে যানজট নিরসনে পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনা কাজে আসছে না বলে মনে করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং রাজধানীতে চলাচলকারীরা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক