নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী মাস (ডিসেম্বর) থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে সব আদালত খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বুধবার (১০ নভেম্বর) আপিল বিভাগের এক মামলার শুনানিতে এ কথা জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে ফিজিক্যাল (শারীরিক উপস্থিতিতে) কোর্ট খুলে দেবো। তবে, ভার্চ্যুয়াল কোর্টে কাজ হয় ডাবল। ধরুন, এখন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রয়োজন। তখন তিনি এনেক্স বিল্ডিংয়ে, তার আসতে আসতে ১৫ মিনিট সময় নষ্ট। আর ভার্চুয়ালি হলে অ্যাটর্নি জেনারেল একই চেয়ারে বসে থাকেন, জাস্ট টিপ দিয়ে দেন। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা সবাই ফিজিক্যাল কোর্টের ভক্ত। ডিসেম্বর থেকে আমি সব ফিজিক্যাল কোর্ট খুলে দেবো। তাছাড়া আপিল বিভাগের সব আইনজীবী বয়স্ক, যাদের অধিকাংশের বয়স ৭০ এর বেশি। ওনারা যখন বাসায় থাকেন তখন কোনো সময় নেন না। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম নিজের বেডরুম থেকে শুনানি করেন। সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, লন্ডন, আমেরিকা থেকেও আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এরকম অনেকেই আছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলও দেশের বাইরে থেকে শুনানি করেছেন। করোনা মহামারির শুরু হওয়ার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যক্রম ভার্চুয়ালি চলে আসছিল। তবে, হাইকোর্ট বিভাগ শুরুতে ভার্চুয়ালি ছিলো। এখন উভয় (ভার্চুয়াল ও শারীরিক) পদ্ধতিতে চলছে। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের আদালতের চেয়ে বাসায় বেশি কাজ করতে হয় বলে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমাদের এখানে (আপিল বিভাগে) যারা আছেন, তারা দৈনিক ১৪/১৫ ঘণ্টা কাজ করেন। কারণ, আমাদের মেইন কাজ হচ্ছে বাসায়। আমরা কোর্টে যতক্ষণ কাজ করি, তার থেকে দ্বিগুণ কাজ বাসায় করতে হয়। তবে গত কিছুদিন ধরে ব্যাক পেইনের জন্য আমি ১০/১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারি না। এ পর্যায়ে এক মামলায় আসামির প্রসঙ্গ টেনে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি দেখেন, এই লোকের (সুজন) পক্ষে আইনজীবী একটা কথাও বলেননি। শুধুমাত্র তার উপস্থিতি আছে। এ কারণে আমরা বাসায় ফাইল নিয়ে সেগুলো ভালো করে দেখে-বুঝে তারপর আদেশ বা রায় দিই। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীর অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, কোর্টের ওপর এমন একটা ব্লেম (অভিযোগ) আসে। এটা কোর্টের জন্য বিব্রতকর। তখন অবশ্য আমি প্রধান বিচারপতি ছিলাম না। তারপরও আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটা বিব্রতকর। আমরা প্রতিটি ফাঁসির রায় দেওয়ার আগে ভালো করে দেখি। কম করে হলেও দশ বার চিন্তা করি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জেল আপিল নিষ্পত্তির পরে সেটি খারিজ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার চাওয়ার আবেদন নাকোচ হওয়ার পরও ফাঁসি কার্যকর হওয়া চুয়াডাঙ্গার মকিম ও ঝড়ুর নিয়মিত আপিল শুনানিতে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। ফাঁসির দ- কার্যকর হওয়া আলোচিত আপিল আবেদনটি ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করে বুধবার (১০ নভেম্বর) আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসিফ হাসান। আপিল শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, তিন নম্বরের সঙ্গে তালিকায় থাকা সাত নম্বর আইটেম একসঙ্গে শুনানি করতে চাই। সাত নম্বর আইটেম সুজন নামে একজনের রেগুলার (নিয়মিত) আপিল আছে। কিন্তু তারও একটা জেল পিটিশন ছিল (৮/২০১৩)। যেখানে তার কোনো আইনজীবী ছিল না। কিন্তু শুনানি করে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ওই মামলায় তিন আসামির মধ্যে দুজনের আপিল ছিল। আর সুজনের ছিল জেল পিটিশন। অথচ নিয়মিত আপিল যাদের, তাদের ফাঁসি হয়েছে, আর জেল পিটিশন শুনানি করে আমরা ওই (সুজন) আসামিকে খালাস দিয়েছি।অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেদিন যারা বললেন, ন্যায়বিচার হয়নি, আপিল নিষ্পত্তির আগে ফাঁসি হয়েছে। এখন কি খালাস পাওয়া সুজনকে ফেরত এনে আবার আপিল শুনানি করবেন? এই কথাগুলো যারা বলেন, তারা সুপ্রিম কোর্টের কোনো আইন জানেন না? চার বছর আগে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া চুয়াডাঙ্গার ঝড়ু ও মকিমের ‘নিয়মিত আপিল’ সুরাহার শুনানিতে বুধবার (১০ নভেম্বর) প্রসঙ্গক্রমে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমাদের এখানে তো এখনও সিস্টেম ডিজিটাল হয়নি। ডিজিটাল করতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল হলে সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্ট (শনাক্ত) করা যাবে। কোন মামলার কোনটা থেকে কোনটা আসছে, এটা শনাক্তই এখন বড় সমস্যা। ডিজিটাল না হলে ডিটেক্ট করা সম্ভব না। কারণ এখন আর কেউ কনভার্সনের দরখাস্ত দেয় না। কনভার্সন হ্যাজ বিকাম অবস্যুলেট। এই যে দেখেন, সুজনের রেগুলার আপিল রয়েছে, কিন্তু জেল আপিলে সে খালাস। তার সময়ে নিষ্পত্তি হওয়া ফাঁসির মামলাগুলোর তথ্য তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, গত ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০২টি। এর মধ্যে অর্ধেক আসামির ফাঁসি থেকে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। সব মামলা পড়েছিল। আমি এগুলো বের করেছি। ২০০৯ সালের ফাঁসির মামলাও পড়েছিল। সেগুলো আমার আমলে শেষ হয়েছে। অথচ এ মামলাগুলো সর্বাগ্রে গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, এটি নিয়ে কোনো আইনজীবী ম্যানশনও করেন না। এসব মামলায় তো একদিনও সময় চাওয়া উচিত না। অথচ তালিকায় আসার পর আইনজীবীরা সময় চান। ২০১৩ সালের দুটি আপিল পড়ে থাকলো অথচ আদালতে ম্যানশন (উপস্থাপন) হলো না- এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, সব ফাঁসির মামলা পৃথক করতে আমি সেকশনে নির্দেশ দিয়েছি। বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে আমি এটা করেছি। যাতে এসব মানুষের কষ্ট না হয়। তারপর সব বাছাই ও আপিল শুনানি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে প্রধান বিচারপতির একার কোনো কথা নাই। এখানে (আপিল বিভাগের) পৃথক পৃথক বক্তব্য। রায়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেক জাজের মতামত নিতে হয়। জুডিশিয়াল পাওয়ারের ক্ষেত্রে অন্যান্যের মতো প্রধান বিচারপতিরও এক ভোট। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে একটি মামলার রায়ের ক্ষেত্রে আমরা চারজন ছিলাম। তার মধ্যে তিনজন বলছেন ফাঁসি দেবে। আমি বলছি ‘না, আমি যাবজ্জীবন দেবো’। দ্বিমত করেছি। আমি প্রধান বিচারপতি বলে তারা তো আমার সঙ্গে একমত হননি। এটাই এখানের পদ্ধতি। গরিব মানুষের মামলায় তারা এসে ধরাধরি না করলে আইনজীবীরা কোন আবেদন দেন না। মামলা পড়ে থাকলে নোটিশও করেন না, বলেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমরা যেহেতু অন মেরিটে আপিলটা ডিসমিস করেছি, আমার মনে হয় রেগুলার আপিলটা ‘নট মেইনটেনেবল’ বলে ডিসমিস বা অকার্যকর করতে পারেন। পর্যায়ক্রমে শুনানি শেষে আদালত ঝড়ু, মকিম ও সুজনের ক্রিমিনাল আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে খারিজ করেন। এ বিষয়ে গাইড লাইন থাকবে বলে জানান আদালত।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম