অনলাইন ডেস্ক :
উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম একটি নতুন আক্রমণাত্মক ডুবোড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক মহড়া নিয়ে শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সতর্কবার্তার মধ্যে পিয়ংইয়ং এমন একটি পরীক্ষা চালালো। পরীক্ষা চলাকালে নতুন এই ড্রোনটি পানির ২৬০ থেকে ৫০০ ফুট গভীরে ৫৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিচরণ করেছে এবং পূর্ব উপকূলের জলসীমায় একটি অ-পারমাণবিক ওয়ারহেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম কেসিএনএ এমনটাই বলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া এখন ওয়াশিংটন আর সিউলকে তার ক্রমবর্ধমান বৈচিত্রপূর্ণ সব পারমাণবিক হুমকি দেখিয়ে বেড়াচ্ছে; তবে পিয়ংইয়ংয়ের এই ডুবোড্রোন আদৌ মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত কিনা, তা নিয়ে সন্দেহও আছে তাদের। গত সোমবার উত্তর কোরিয়া একটি মাটির নিচের সাইলো থেকে স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়েছে। স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার জন্য দেশটি সাধারণত এই ধরনের সাইলোই বেশি ব্যবহার করে। শত্রু জলসীমায় ঢুকে চোরাগোপ্তা আক্রমণ এবং পানির নিচে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশাল তেজস্ক্রিয় তরঙ্গ সৃষ্টি করে নৌপথে আক্রমণকারী বাহিনী বা বড় কর্মক্ষম বন্দর ধ্বংস করার লক্ষ্যে ‘হায়িল’ বা সুনামি নামের নতুন এই ড্রোনটি বানানো হয়েছে, বলেছে কেসিএনএন। “পানির নিচে হামলা চালাতে সক্ষম এই পারমাণবিক ড্রোনটি যে কোনো উপকূল ও বন্দরে মোতায়েন করা যেতে পারে কিংবা কোনো অভিযানের জন্য জাহাজের সঙ্গে করে নিয়েও যাওয়া যেতে পারে,” বলেছে বার্তা সংস্থাটি। কিম ড্রোনটির পরীক্ষা তদারকি করেন বলেও জানিয়েছে তারা। দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা ডুবোড্রোন নিয়ে উত্তর কোরিয়ার দাবি পর্যালোচনা করে দেখছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, কোনো পারমাণবিক পরীক্ষার লক্ষণ দেখা যায়নি। উত্তর কোরিয়া ছোট অস্ত্রে বসানোর উপযোগী ক্ষুদ্রাকৃতির পারমাণবিক ওয়ারহেড বানাতে পেরেছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নতুন করে পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করলে তাতে এ ধরনের ওয়ারহেড ঠিকঠাক যুক্ত ও ব্যবহার করতে পারাই দেশটির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে বলে অনুমান পশ্চিমা বিশ্লেষকদের। কেসিএন বিশালাকৃতির এক টর্পোডোসদৃশ বস্তুর পাশে হাস্যজ্জ্বল কিমের একটি ছবিও প্রকাশ করেছে, কিন্তু ওই বস্তুটিই নতুন ড্রোন কিনা তা নিদিষ্ট করে বলেনি তারা। আরও কিছু ছবিতে পানির নিচে বস্তুটির গতিপথ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠে বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। অস্ত্রটির কার্যক্রমের সঙ্গে রাশিয়ার পসেইডন পারমাণবিক টর্পেডোর মিল আছে, এই ধরনের অস্ত্র উপকূলীয় এলাকায় তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের মাধ্যমে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো অঙ্কিত পান্ডা। পশ্চিমাঞ্চলীয় জলসীমায় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত সেনাদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ল বলেছেন, ‘বেপরোয়া উস্কানির’ জন্য উত্তর কোরিয়াকে যেন মূল্য দিতে হয়, তা নিশ্চিত করবেন তিনি। উত্তর কোরিয়া বুধবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথাও স্বীকার করেছে। বলেছে, স্বল্প দূরত্বে পারমাণবিক হামলার অনুশীলন ওই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোঁড়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী আগেই এই পরীক্ষার খবর নিশ্চিত করেছিল।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু