নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশজুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির পাশাপাশি মরছে মানুষ। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসাধীন রোগীদের বড় অংশের মধ্যেই শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে। জীবন বাঁচাতে রোগীর স্বজনরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের জন্য হন্য হয়ে ছুটছে। কিন্তু কোথাও আইসিইউ বেড খালি নেই। আইসিইউ বেড নিয়ে রোগীদের মধ্যে আর্তনাদ বাড়ছে। রোগীদের নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি চলছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আইসিইউ শয্যা না পেয়ে স্বজনেরা রিস্ক বন্ডে সই করে গুরুতর মুমূর্ষু রোগীর সাধারণ ওয়ার্ডে সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছে। চিকিৎসা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ডেঙ্গু রোগী যথাসময়ে আইসিইউ বেড না পাওয়ায় মৃত্যুর হার বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাস্থ্য খাতে আইসিইউ বেডের ঘাটতির বিষয়টি রোগীর স্বজনদের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছে। খোদ রাজধানীতেই এমন অবস্থা। আর দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় এখনো আইসিইউ নেই। তাতে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে বিপুলসংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সরকারি হিসাবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ হাজার ৯৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় ২৭ হাজার ৬৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে ১৩ হাজার ৩৩৭ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি।
সূত্র জানায়, দেশের ৫০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেশের সব জেলা-উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। আগে মে-অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু হতো। এখন ১২ মাসই ডেঙ্গু হচ্ছে। বিগত ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ওই বছর আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ালেও ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটা কম ছিল। আগে শুধু রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও এখন ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে আইসিইউর চিকিৎসা আইসিইউ দিয়েই করতে হয়। সরকার ইতোমধ্যে আইসিইউ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে উপজেলা পর্যন্ত আইসিইউ থাকা প্রয়োজন। কারণ ডেঙ্গু রোগী শকে চলে গেলে তাদের বেশির ভাগ মারা যায়। সেজন্য আইসিইউ খুব জরুরি।
এদিকে বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত জানান, সারা দেশে নতুন করে আরো ১ হাজার ২০০ আইসিইউ বেড তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইউনিসেফ, ইউএসআইডি মেশিনগুলো আনছে। এটা বিশ্বব্যাংকের একটি বড় প্রকল্প। ৪৩টি জেলা সদর হাসপাতালে ১০টা করে আইসিইউ বেড, ৩৭টি নতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টা করে আইসিইউ বেড স্থাপন করা হবে। সেখানে লিকুইড অক্সিজেনসহ আধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকবে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা ও জেনারেটরও থাকবে। ডেঙ্গু রোগীরা শকে গেলে অধিকাংশ মারা যায়। তবে শকে যাওয়ার আগে আইসিইউ সাপোর্ট পেলে দ্রুত সুস্থ হয়। জেলা-উপজেলায় আইসিইউ না থাকায় রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে। ৪৩ জেলা সদর হাসপাতালের ১৬ জন ডাক্তার ও ১৬ জন নার্সকে আইসিইউ ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সরকারি ১৬টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সমসংখ্যক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বাকি আছে আরো ৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শিগগিরই তাদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক