নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিন দিন দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি তীব্রতর হচ্ছে। আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিয়ে সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার সাতটি সরকারি হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার, নার্সদের অন্য রোগীদের সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। এমনকি সুচিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু খবরও পাওয়া গেছে।
সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডাক্তার নার্সদের রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে পদায়ন শুরু হয়েছে। একইভাবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও এ পদায়ন শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিদিন দ্বিগুণ হারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া পরিসংখ্যানে প্রকৃত তথ্যের গোপন করে এক তৃতীয়াংশের কথা জানানো হচ্ছে। অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালই ডেঙ্গু বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তথ্য দিচ্ছে না। আর কোন কোন সরকারি হাসপাতাল থেকেও তথ্য পেরেও তারাও নিয়মিত তথ্য দেয় না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিকল্প নেই। সামনে ডেঙ্গু মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। কারণ সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হবে। পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় এডিস মশার বংশ বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা। এডিস মশা নিধন করা না গেলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
সূত্র জানায়, বিগত ১৯৭৪ সালে দেশে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে অভিজ্ঞ জনবল তৈরি ও প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতি বছর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭৫ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বের হচ্ছে। অথচ তাদেরকে মশক নিধন কার্যক্রমে রাখা হয়নি। এ প্রতিষ্ঠানটি ও আইইডিসিআর করোনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অতি সম্প্রতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দুই সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয।
ওই সভায় মশক নিধন নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা বলায় তখনই বিশেষজ্ঞরা উপলব্ধি করতে পারেন মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন নিয়ে প্রকৃত কোন ধারনাই নাই। এমন পরিস্থিতিতে যার কাজ তাকে দিয়ে না করালে জাতির দুর্দশা শেষ হবে না। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, চিকিৎসকদের কাজ হলো চিকিৎসা দেয়া, মশা মারার কাজ তাদের না। যার কাজ তাকে না করালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়াই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, চিহ্নিত শত্রুকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। কিন্তু তা নিয়ে উদাসীনতা মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি