নিজস্ব প্রতিবেদক:
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু হয়, যার সুফল নিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু করা হয় ই-গেট। অনেক প্রচার-প্রচারণা করে চালু করা হয় ই-পাসপোর্টধারীদের এই জন্য ই-গেট সেবা। ১১ মাস ধরে পরীক্ষামূলক ই-গেট ব্যবহারের পর গত বছরের ৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। তখন বলা হয়েছিল, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করায় দ্রুত সম্পন্ন হবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। কিন্তু বাস্তবে ই-গেটের যে সুফল পাওয়ার কথা, তা মিলছে না। জানা গেছে, চালুর আট মাস পর থেকেই অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে ই-গেট। খোলা থাকলেও ই-গেট পেরিয়ে সেই আগের নিয়মেই যেতে হয় ইমিগ্রেশন ডেস্কে। এতে একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ কিংবা ছাড়ার সময় হলেই দীর্ঘ হচ্ছে লাইন। ই-গেট নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, একজন ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী ভেরিফিকেশন শেষে ই-গেট অতিক্রম করতে পারবেন। প্রথমে পাসপোর্টের ডিজিটাল ছবিযুক্ত পৃষ্ঠা ই-গেটের মনিটরে স্পর্শ করতে হবে। ১০/১৫ সেকেন্ডের মধ্যে কাচের দরজা খুলে যাবে। ই-গেট দিয়ে প্রবেশ করার পর স্ক্যানিং গেটের সামনে দাঁড়ানোর পর ৫/৬ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য ভেরিফাই করবে। এরপর গেট খুলে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে। ছবি না মিললে বা পাসপোর্ট ভুয়া হলে কিংবা বিদেশ ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গেট খুলবে না। এমন ধারণা থেকে ই-গেট চালু করা হয়, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। গত ৭ জুলাই সেটি উদ্বোধনের পর ইমিগ্রেশনের জন্য যাওয়া যাত্রীরা এই সেবা কিছুদিন ব্যবহারও করেন। এরপর শুরু হয় কেন্দ্রীয় ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-গেটের সার্ভারের সংযুক্ত নিয়ে জটিলতা। কিছুদিন যেতে না যেতে মাঝে মধ্যে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী বিমানবন্দরে বহির্গমনের সময় ই-গেট বন্ধ দেখতে পান। ফলে তারা ম্যানুয়ালি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বহির্গমন করেন। এছাড়া, দেখা যায় যাদের ই-পাসপোর্ট আছে, তাদের অনেকেই ই-গেট ব্যবহার করছেন না। ফলে সময় লাগছে প্রায় আগের মতোই। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েই সব যাত্রীকে সম্পন্ন করতে হচ্ছে ইমিগ্রেশন। ২০২০ সালে ই-পাসপোর্ট চালুর পর থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপনের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে দুই বছরে পেরিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে শাহজালালে স্থাপন করা হয় মোট ২৬টি ই-গেট। এর মধ্যে আগমনীতে ১২টি, বহির্গমনে ১২টি ও ভিআইপিতে দুটি ই-গেট রয়েছে। যাদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, তারা এসব গেট ব্যবহার করে দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীদের অভিযোগ, ই-গেট চালু হওয়ার আগে ও পরে এর সুবিধা নিয়ে সরকার ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়েছে। বলা হয়েছে অল্প সময়ে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই যাত্রী ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। এখন দেখা যায় প্রায় সময়ই ই-গেট বন্ধ থাকে। যখন চালু থাকে, তখন অনেকেই এই গেট ব্যবহার বোঝেন না। ফলে যাত্রীরা এর সুফল পাচ্ছেন না। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও এসব গেট ব্যবহারে যাত্রীদের উৎসাহ দিচ্ছে না। তবে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের সব ই-গেট সচল। দিনে দুই থেকে তিন হাজার ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী এসব গেট ব্যবহার করছেন। এতে যাত্রীরাও সন্তুষ্ট। তবে কারিগরি কোনো কারণে হয়তো কিছু সময়ের জন্য ই-গেট বন্ধ থাকে। অন্যথায় সব সময়ই চালু থাকে ই-গেট। ই-পাসপোর্টধারীদের সহযোগিতা করতে প্রত্যেক গেটে লোক থাকেন বলেও জানান তারা। ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্টদের মতে, ই-গেটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুধু পাসপোর্ট ও যাত্রীকে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাত্রীর ভিসা পরীক্ষা করা যায় না। এ ছাড়া যাত্রী কোথায় যাবে, কোন উড়োজাহাজে ভ্রমণ করবে, ই-গেটে সেই তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে ই-গেট ব্যবহার করলেও আগের মতোই ভিসা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে ম্যানুয়ালি। এতে ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। এর মধ্যে কাছাকাছি সময়ে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করলে বা গেলে ইমিগ্রেশনে আরও বেশি চাপ পড়ে। এই চাপ সামলাতে ইমিগ্রেশন পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম জানান, দিনে যত সংখ্যক যাত্রী বিমানবন্দরে যাতায়াত করেন তাদের গড়ে ১৫ শতাংশ ই-পাসপোর্টধারী। তাদের অনেকেই ই-গেট ব্যবহার করতে ভয় পান কিংবা আগ্রহী নন। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ই-গেট ব্যবহার করেন না। আমরা চেষ্টা করি, ই-পাসপোর্টধারীদের ই-গেট ব্যবহার করাতে। প্রতিটি গেটে আমাদের লোকজনও রয়েছে। তিনি বলেন, এখন ই-পাসপোর্টের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। একটা সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি থাকবে না। তখন ই-গেটের শতভাগ সুবিধা পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২২ মার্চ দেশে ই-পাসপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথিবীর ই-পাসপোর্টধারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৯তম দেশ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ পাসপোর্টধারীকে ই-পাসপোর্ট দিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর। আরও প্রায় ১ কোটি মেশিন রিডেবল (এমআরপি) পাসপোর্ট রয়েছে। এখন থেকে এমআর পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক