ঢাকা শহরের অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি মানা হয়নি দুটি স্টেশনের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখার সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতিমালাও।
পরিবহন ও পেট্রোলিয়াম খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে গ্রাহকদের সহজে গাড়ির জ্বালানি পেতে সমস্যা হচ্ছে।
তাদের মতে, মোটর গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও শহরে পেট্রোল পাম্পের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
পেট্রোলিয়াম খাতের প্রধান সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানান, সিটি করপোরেশন এলাকা, জেলা শহর ও অন্যান্য স্থানে নতুন পেট্রোল পাম্প স্থাপনের বিষয়ে সরকার ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি কিছু সংশোধনীসহ একটি গেজেট প্রকাশ করেছে।
সরকারি নীতি অনুযায়ী, উল্টো দিকের দু’টি পেট্রোল পাম্পের মধ্যে ১ কিলোমিটার এবং একই দিকে ২ কিলোমিটারের দূরত্ব থাকা উচিত। সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরের বাইরে যেসব পেট্রোল পাম্প মূলত মহাসড়কের পাশে সেগুলোর ক্ষেত্রে দূরত্ব হতে হবে দ্বিগুণ।
কিন্তু ঢাকা শহরে পাম্প স্থাপনের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন দূরত্ব সঠিকভাবে বজায় রাখা হয়নি।
বিপিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ঢাকা শহরে পাম্পগুলো অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে এবং সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়নি।
কিন্তু এসবই নতুন নীতিমালা প্রণয়নের আগেই করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে নতুন কোনো পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে না।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আসলে জমির অতি মূল্যের কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ব্যক্তিগত জমিতে নতুন পেট্রোল পাম্প স্থাপনে মানুষের আগ্রহ নেই।’
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক বলেন, জমি অন্য কাজে ব্যবহার বেশি লাভজনক হওয়ায় ব্যক্তি মালিকানায় পেট্রোল পাম্প ব্যবসা চালানো সত্যিই কঠিন।
অনেক পাম্প মালিক এখন তাদের রিফুয়েলিং ব্যবসা বন্ধ করে ভালো মুনাফার জন্য একই জমিতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের চেষ্টা করছেন।
পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় চার হাজার, ঢাকা জেলায় ৩০০টি এবং ঢাকা শহরে ৮০টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ৫০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে ৩০টি পাম্প রয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের কাছাকাছি কয়েকটি স্থানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি ফিলিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- মহাখালী, গাবতলী এবং সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী অন্যতম।
নাজমুল হক জানান, গত ২০ বছরে ১১টি পেট্রোল পাম্প মালিকরা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং জমিগুলো বহুতল মার্কেট, অ্যাপার্টমেন্ট বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জেনারেল এরশাদের আমলে নিরাপত্তাজনিত কারণে মহাখালী থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ফিলিং স্টেশন স্থাপনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
তিনি বলেন, নিকুঞ্জ এলাকায় শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) স্থাপিত একটি পাম্প রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ঢাকা জেলার অভ্যন্তরে যেকোনো স্থানে যেকোনো পেট্রোল পাম্প স্থাপনের প্রাথমিক অনুমতি দেন এবং চূড়ান্ত অনুমতি আসে বিপিসির পক্ষ থেকে।
বিপিসির চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে পূর্বানুমতি নেওয়ার জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ১৪টি পৃথক কর্তৃপক্ষ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
——ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি