নিজস্ব প্রতিবেদক:
আবাসন সঙ্কটকে ঘিরে গড়ে উঠছে ঢাকার চারদিকে বিপুলসংখ্যক অনুমোদনহীন আবাসন প্রকল্প। কৃষিজমি, বনবাদাড়, জলাভূমি, খাল-নালার জমিতেই গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। রাজধানী লাগোয়া কেরানীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের অনেক জায়গাতেই অসংখ্য অবৈধ আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে। আর নিয়ম লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ওসব আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন না দেয়নি। কিন্তু চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অনেক সাধারণ মানুষ মাথা গোঁজার জন্য ওসব প্রকল্প থেকে উচ্চমূল্যে প্লট কিনে রাজউক অনুমোদন না দেয়ায় ঘরবাড়ি বানাতে পারছে না। তবে কেউ কেউ রাজউকের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা) থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়ি বানাচ্ছে। রাজউক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আবাসন প্রকল্প শুরুর সময় রাজউকের নিবন্ধন নিতে হয়। তারপর রাজউকে প্রকল্পের অনুমোদনের জন্যআবেদন করতে হয়। কিন্তু রাজউকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে অনেক জায়গার ছাড়পত্র প্রয়োজন পড়ে, অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। যেটা সহজ নয়। সম্প্রতি রাজউক কেরানীগঞ্জের ১৬টি আবাসন প্রকল্পে প্লট কেনাবেচা বন্ধে নোটিশ দিয়েছে। তার আগেও বিভিন্ন সময় গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার এলাকায় গড়ে ওঠা হাউজিং কোম্পানির ক্ষেত্রেও রাজউক থেকে ওই রকম নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি অবৈধ আবাসন প্রকল্পের প্লট বেচাকেনা ও ভরাট কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, অননুমোদিত ভুঁইফোঁড় আবাসন প্রকল্পের প্লট কিনে অসংখ্য মানুষ বিপাকে পড়ছে। কারণ রাজউক এলাকায় অন্য কারোর নকশার অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার নেই। তারপরও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নিয়ে অনেকে ঘরবাড়ি তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজউক থেকে সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগে রাজউকের সেগুলো মনিটরিং করার মতো জনবলের ঘাটতি ছিল। কিন্তু এখন তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে। বিগত ২০০৪ সালে বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা জারি হওয়ার পর থেকে রাজউকের হিসাব অনুযায়ী ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় অনুমোদিত আবাসন প্রকল্পের সংখ্যা মাত্র ৩২টি। তার বাইরে রাজউকের অনুমোদনহীন আবাসন প্রকল্পের ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তবে ভবনটি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে তৈরি হলে জরিমানা আদায় সাপেক্ষে রাজউক বৈধতা দেয়ার কথা ভাববে।
সূত্র আরো জানায়, আবাসন ব্যবসায়ীরা যাতে আর কোনো কৃষিজমি ও জলাধার ভরাট করে প্রকল্প করতে না পারে সেজন্য এখন থেকে জমি কিনতে গেলে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অনুমতি নিতে হবে। ডিসি যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দিলে ওই জমি আবাসন ব্যবসায়ীরা কিনতে পারবে। শিগগির এ ব্যাপারে ডিসিদের চিঠি দেয়া হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা জানান, হাউজিং প্রকল্প করতে হলে নিয়ম অনুযায়ী জলাধার, উন্মুক্ত স্থান, স্কুল, খেলার মাঠ রাখার কথা। সেগুলো না রেখে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন চাওয়া হলে তা দেয়া হবে না। শুধুমাত্র যারা শর্তগুলো পূরণ করতে পেরেছে তারাই অনুমোদন পেয়েছে। অনেক হাউজিং কোম্পানিই জমি না কিনে জমির মালিকের কাছ থেকে সম্মতি নেয়। তারপর প্লট বানিয়ে ওই মালিকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দেয়। রাজউক সেগুলোও নিয়ন্ত্রণ করবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক