নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার চারপাশের নদীগুলো রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নদীগুলোর দূষণ ও দখলরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা ৩টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে দূষণ, দখল এবং নাব্য। মহাপরিকল্পনায় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ, দখল এবং নাব্য প্রতিটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহের শাখা নদী, খালগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি, নদী দূষণ প্রতিরোধ কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চলমান বর্তমান প্রকল্পসমূহ পর্যালোচনা করে প্রস্তুত করা হয়।
দূষণ, দখলরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধিকল্পে প্রণীত মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে চারটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো ক্রাশ প্রোগ্রাম (১ বছর), স্বল্প মেয়াদি (৩ বছর), মধ্য মেয়াদি (৫ বছর) এবং দীর্ঘ মেয়াদি (১০ বছর)। মহাপরিকল্পনা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য নদী রক্ষার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নদীর রক্ষার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর দুই তীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচটি নদীর তীরে অভিযান চালিয়ে ২৩ হাজার ৫৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ৫৭৭ দশমিক ৫৪ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।
উচ্ছেদকৃত নদীর তীরে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার সীমানা পিলার স্থাপন, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ৩টি ইকোপার্ক ও ১৪ জেটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এক হাজার ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অধীনে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হবে। বিনোদনের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সিন্নিরটেক এবং তুরাগ নদীর তীরে আশুলিয়া ও টঙ্গীতে ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পে মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত থাকলেও তা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ঢাকার চারপাশের নদী দখল ও দূষণরোধে ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনায় ইতোমধ্যে নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বনায়ন তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নদী দূষণরোধে বর্জ্যরে উৎসমুখ বন্ধ করা হবে। বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হবে।
তাছাড়া সারাদেশের নদ-নদী দখলমুক্ত রাখতে ও তীরভূমির সৌন্দর্য্য বর্ধনে ৫০ হাজারের অধিক বৃক্ষরোপণ করবে সরকার। এর মধ্যে চলতি মাসেই নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা ও চাঁদপুরসহ দেশের ১৯টি নদী বন্দরে ৬ হাজারের অধিক বৃক্ষরোপণ করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
আর ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো বেদখল থেকে রক্ষা এবং তীরভূমির সৌন্দর্য্য বর্ধনের ৪৬ হাজার বৃক্ষরোপণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি। ২০২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর তীরে অভিযান চালিয়ে ২৩ হাজার ৫৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় ৫৭৭ দশমিক ৫৪ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত নদী ওই তীরভূমিতে নারিকেল, কৃষ্ণচূড়া, নিম, আকাশমনি, অর্জুন, চালতা ও মেহগনি গাছের চারা রোপণ করা হবে।
প্রাথমিকভাবে তুরাগ নদীর তীরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) পাঁচ হাজার বৃক্ষের চারা রোপণ করা হবে। তাছাড়া ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার নৌ-পথে দুই পাশে নদীর তীরে ফলজ, বনজ, ভেষজ ও ফুলের গাছ লাগানো হবে। নদীপাড়ে এই সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৫৬২টি সীমানা পিলার, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে ৮০টি, কি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ কিলোমিটার, হাঁটার সেতু ৩৯৫ মিটার, নদী তীরে বসার বেঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে ২৯১টি, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে ৮৫০ মিটার, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ৩ কিলোমিটার ৫০০ মিটার, জেটি নির্মাণ ১৪টি ও ২৩০০০ বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পে সার্বিক ৬৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, ঢাকার চারপাশের নদীর তীরে ওয়াকওয়ে বনায়ন কার্যক্রম অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে গাছের চারা লাগানো হয়েছে। ঢাকার চারপাশে সব মিলে প্রায় ৪৬ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হবে। আর সারাদেশের ১৯ নদী বন্দরে ৬ হাজার ৮৯ টি চারা রোপণ করা হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি