রাজধানীর ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনে রাস্তায় প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
রবিবার (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকা মেট্রো -ঘ ২১-৮৪৫৬ নম্বর প্লেটযুক্ত গাড়িটি সেখানে পড়ে ছিল। পরে মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গাড়িটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারী এক ব্যক্তি গাড়িটি নিয়ে পোস্ট করলে এর মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
ট্রাফিক অ্যালার্ট নামক একটি গ্রুপে জুনায়েদ কামাল নামের এক ব্যক্তি রাত ১টার দিকে গাড়িটি নিয়ে একটি পোস্টে লেখেন, ‘ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের দিকের রাস্তায় কেউ একজন ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ফেলে গেছেন। রবিবার সকাল থেকে গাড়িটি এখানে পড়ে আছে, গাড়িটি আনলক অবস্থায় আছে। কেউ কি এর মালিককে চিনেন?’
তবে দিনরাত চেষ্টার পর গাড়িটির মালিকের সন্ধান না পেলেও কিছু তথ্য ও ছবিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে গাড়িটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের।
গাড়িটির পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই গাড়িটি কেনা হয়েছিল তবে রেকর্ড আপডেট করা হয়েছে ২৮ জুলাই। ট্যাক্স টোকেন ইস্যু করা হয়েছে ৩ আগস্ট। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুলাই। ট্রাস্টি সার্টিফিকেট নেওয়ার তারিখ ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। সেটিরও মেয়াদ গত ৩ আগস্ট শেষ হয়েছে। ২০২২ সালে ম্যানুফেকচার করার সময় গাড়িটির খালি ওজন ২ হাজার ২০০ কেজি আর মালামাল ৩ হাজার ২২০ কেজি পর্যন্ত তোলা সম্ভব। গাড়িটির ফিটনেস ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। যার মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।
গাড়িটির মালিকানাধীনের জায়গায় প্রাইভেট উল্লেখ করা হয়েছে। মালিকের নাম লেখা আসাদুজ্জামান খান ও তার বাবা মৃত আশরাফ আলী খান। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে মিরপুর বিআরটিএ-তে।
এছাড়াও গাড়ি কেনার জন্য করের টিন নম্বরের জায়গায় (৫১১১১১২৫৫০৫৬) দেওয়া হয়েছে। মালিকের মোবাইল ফোন নম্বর হিসেবে দেওয়া হয়েছে -০১৭১১-৫৪১৫৬৯।
গাড়িটি কেনার জন্য মালিকের যে নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটির সূত্র ধরে নাম্বার ও পরিচয় শনাক্তকারী অ্যাপস ট্রু কলারে খুঁজে দেখা যায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম।
এছাড়াও এই গাড়ি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সে বিষয় প্রমাণের আরও একটি ছবি মিলেছে। ছবিতে দেখা যায়, গাড়িটি কেনার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সঙ্গে কয়েকজন ছবি তুলছেন। ছবিতে মন্ত্রী ছাড়াও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের সাবেক ডিসি এইচএম আজিমুল হকসহ মন্ত্রীর কয়েকজন কাছের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তারা গাড়িটি কেনার পর শোরুমে একটি যৌথ ছবিও তোলেন। পাশে গাড়িতে রাখা ছিল। সেটির সামনে লাগানো নাম্বার প্লেটের সঙ্গে উদ্ধারকৃত গাড়ির নাম্বার প্লেটের মিল রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্ত্রী থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী পালাতে শুরু করে। গা ঢাকা দেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। পালানোর কারণে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাড়িতে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর হামলা চালাচ্ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই গাড়ির চালক তার বাসার গ্যারেজে নিয়ে রেখেছিলেন গাড়িটি। সম্প্রতি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় সেই চালক গাড়িটিকে ধানমন্ডির রাস্তায় রেখে পালিয়ে গেছেন।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম