May 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, May 6th, 2024, 9:39 pm

ঢাকা আউটার রিং রোডের দৈর্ঘ্য বাড়ছে ৪৬ কিমি, ব্যায় বাড়ছে তিনগুন

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ যানজট মুক্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয় ঢাকা আউটার রিং রোড নির্মাণের। প্রথমে এটির দৈর্ঘ্য ১৩২ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হলেও পরে তা বেড়ে হয় ১৭৮ কিলোমিটার। অর্থাৎ এটির দৈর্ঘ বাড়ছে ৪৬ কিলোমিটার। তবে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির তুলনায় ব্যয়বৃদ্ধি অনেক বেশি। ১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যয় আগের চেয়ে তিন গুণ বাড়তে যাচ্ছে। তবে নতুন নকশায় সড়ক নির্মাণের খরচ বাড়লেও ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনা উচ্ছেদের খরচ কমে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুরানো নকশা অনুযায়ী সঠিক সময়ে কাজ করতে না পারায় আউটার রিং রোড রাজধানী থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। কারণ আগের নকশার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেমন গড়ে উঠেছে বড় অবকাঠামো তেমনি নদীর পাড় হয়েছে দখল। এতেই বাড়ছে ভূমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণ ব্যয়। বিকল্প হিসেবে বৃহৎ পরিসরে নতুন নকশায় নতুন এলাকায় প্রকল্পটি বর্ধিত করা হচ্ছে। আউটার রিং রোডের নতুন এই নকশা তৈরি করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আউটার রিং রোড আগের জায়গাতেই করা যেত। এজন্য আগের নকশার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বড় অবকাঠামো তৈরির আগেই যথা সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হতো।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীকে ঘিরে যানজট নিরসনে তিনটি বৃত্তাকার সড়ক (রিং রোড) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তার একটি আউটার রিং রোড আর অন্য দুটি হলো ইনার রিং রোড ও মিডল রিং রোড। আর আউটার রিং রোড নির্মাণের ফলে এর সঙ্গে সংযুক্ত হবে দেশের প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক। একইসঙ্গে যানবাহন আউটার রিং রোড হয়ে মিডল ও ইনার রিং রোড হয়ে রাজধানীতে ঢুকবে। এখন আউটার রিং রোডের আগের জায়গাতেই মিডল রিং রোড করা হবে।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, আউটার ও মিডল রিং রোড নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। আর ইনার রিং রোড বাস্তবায়ন করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের জুলাইয়ে আউটার রিং রোডের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে সমীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় আরও ছয় মাস সময় বাড়ানো হয়। ডিটিসিএ সূত্র বলছে, ২০০৫ সালের আরএসটিপিতে ৮ লেনের ও ২৪০-৩০০ ফুট প্রস্থের আউটার বৃত্তাকার সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ১৩২ কিলোমিটার।

এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ আর বাকি ৮৫ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ককে উপযোগী করে তুলতে হবে। সেসময় নকশা ছিল হেমায়েতপুর-কালাকান্দি থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা হয়ে কড্ডা -বাইপাইল (ঢাকা ইপিজেড) হয়ে আবারও হেমায়েতপুর আসতে হবে। তবে নতুন নকশায় সড়কে আগের চেয়ে তিন কিলোমিটার দূরে সরে গেছে। আর নতুন নকশায় এই সড়কের পুরোটাই নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এখন হেমায়েতপুর থেকে সরে সিংগাইর থেকে নারায়ণগঞ্জের শেষ সীমানা দিয়ে নতুন নকশা হবে। এ প্রকল্পের জন্য এখন জমি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ডিটিসিএ বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে দুই পর্বে। প্রথমে ২০২৮ সালের মধ্যে এই সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা হচ্ছে না।

খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায়ও (ড্যাপ) আউটার রিং রোড বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। ইনার ও মিডল রিং রোডের কাজ শেষে আউটার অংশের কাজ শুরু হবে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, আগে যে নকশারয় আউটার রিং রোড হওয়ার কথা ছিল সেটি এখন মিডল রিং রোড হবে। আর পরিবর্তিত নকশায় রাজধানীর বাইরে এখন আউটার রিং রোড হচ্ছে। ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে।

অন্যদিকে আগের পরিকল্পনায় মিডল রিং রোড ছিল না বলেও জানান এ প্রকৌশলী। ডিটিসিএ সূত্র বলছে, রাস্তার জন্য সমীক্ষায় নির্ধারিত এলাকার ছবি ড্রোনের সাহায্যে তুলে রাখা হচ্ছে। ফলে নকশা প্রকাশ হলে ওই সব এলাকার জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও অবকাঠামো তৈরি করে যেন অসাধু চক্র কয়েক গুণ দাম হাতিয়ে নিতে পারবে না।

ঢাকা আউটার রিং রোড প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ডি এম গিয়াস মালিক বলেন, নকশা শেষ হলেই কেবল বলা যাবে সড়কের শেষ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য কতটা বাড়বে। তিনি আরেও বলেন, নকশা শেষ হলে চার সিটি করপোরেশনের (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ) মেয়র, সওজ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে কর্মশালা করা হবে। এতে অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে সেটি ঠিক করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও প্রকল্পটির সদস্য ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, আগের নকশা অনুযায়ী চাইলেই আউটার রিং রোড করা যেত তবে সময় থাকতে সেটি করা হয়নি। ফলে এখন সড়কটি অনেক বাইরে চলে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বাড়বে। তবে আগের অ্যালাইনমেন্ট থেকে এখানে খরচ কম হবে বলে জানিয়েছেন এ অধ্যাপক।