ঢাকা বিমানবন্দরের ভেতরের কাস্টমসের লকার থেকে ৫৫ কেজি সোনার বার নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ওই এলাকার ভিতরে বা আশেপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন হবে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) ভেতরের পুরো এলাকা সিসিটিভি কভারেজের আওতায় থাকলেও রহস্যজনকভাবে গুদামের ভেতরে এমন কোনো ক্যামেরা বসানো হয়নি। এমনকি গুদামের বাইরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা পাওয়া গেলেও সেটি নিষ্ক্রিয় পাওয়া গেছে। যার কারণে সোনা চুরির সঙ্গে কারা সরাসরি জড়িত তা খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
একটি শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেছেন, বিমানবন্দরের ভেতরের পুরো এলাকা চব্বিশ ঘন্টা সিসিটিভি ক্যামেরা কভারেজের আওতায় রাখা হয়েছে।
এছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সদস্যদের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে পুরো এলাকা।
এমন নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি এবং গুদামে সিসিটিভি ক্যামেরার উপর কাস্টমস হাউসের নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টি প্রশ্রেন জন্ম দিয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, গত শনিবার সোনা চুরির ঘটনা ঢাকা কাস্টমস বিভাগের নজরে আসে। তবে পরের দিন রবিবার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে আসে। ঢাকা কাস্টমস হাউস সঠিকভাবে তালিকা করার পর নিশ্চিত হয় তার নিজস্ব বিমানবন্দরের গোডাউন থেকে প্রায় ৫৫ কেজি সোনা চুরি হয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের একটি সূত্র জানায়, গুদামে আনুমানিক ২০০ কেজির বেশি সোনা ছিল। পুরো ঘটনা তদন্তে ঢাকা কাস্টমস হাউস তাদের যুগ্ম কমিশনার (শুল্ক) মিনহাজ উদ্দিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
এছাড়া, রবিবার রাতে ঢাকা কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে গুদামের ভিতরে আলমারির তালা ভেঙে কেউ ৫৫ কেজি সোনা নিয়ে যায়।
শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুরি যাওয়া এই সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
মামলার এজাহারে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে গুদাম থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেন।
পরে রবিবার গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা দেখতে পান যে আটক রসিদ (ডিএম) অনুসারে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জব্দ করা ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা চুরি হয়েছিল।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি-উত্তরা বিভাগ) মোরশেদ আলম ইউএনবিকে বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা কাস্টমস হাউসের চার সিপাহী যারা বিমানবন্দর কাস্টমসের গুদামের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন ছিল তাদের এখন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি আরও বলেন, নিখোঁজ সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৪৩৭ ডিটেনশন মেমো (ডিএম) এর অধীনে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করেছিল।
নিয়ম অনুযায়ী এই স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কেন নিয়ম মানা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেও জানান ডিসি।
তিনি আরও বলেন, তারা স্বর্ণের গুদাম পরিদর্শন করে দেখেন, এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সিসিটিভির আওতায় নেই। তাই কে স্বর্ণ চুরি করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা কঠিন। গুদামে নজরদারির জন্য সক্রিয় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে কারা সোনা নিয়ে গেছে তা খুঁজে বের করা সহজ হতো।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার নুরুল হুদা আজাদ রবিবার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি তদন্তে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম