April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 26th, 2021, 8:11 pm

ঢাবির গ্রন্থাগার খোলার প্রথম দিনেই অপ্রত্যাশিতভাবে চাকরিপ্রত্যাশীরা

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। ছবিটি রোববার তোলা।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে জোর করে ঢুকে পড়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ সময় তাদের আটকানোর চেষ্টা করে গ্রন্থাগারের কয়েকজন কর্মচারী আঘাত পেয়েছেন। রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) খোলার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্নাতক শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদেরই শুধু গ্রন্থাগারে আসার অনুমতি ছিল। তাদের বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত মাস্ক নিয়ে তারা গ্রন্থাগারের গেটে দাঁড়িয়েছিলেন। গ্রন্থাগারের গেটে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা এবং করোনা টিকা নেওয়ার সনদ পরীক্ষা করে ঢুকানো হচ্ছিল। তারা শুরুতে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ঢুকলেও একটু পরেই কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে হুড়োহুড়ি করে ঢুকতে থাকেন। এ সুযোগে চাকরিপ্রত্যাশীরাও ঢুকে পড়েন। এ সময় দায়িত্বে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মচারীকে ধাক্কা এবং ঘুষি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তারা আরও জানান, বাইরের কোনো বই নিয়ে লাইব্রেরিতে ঢোকা যাবে না এমন নিয়ম করা হলেও সে নিয়মও মানেননি শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতির বই হাতে নিয়ে ঢুকে পড়েছেন তারা।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। ছবিটি রোববার তোলা।

ঘটনার আধঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক নাসির উদ্দীন মুন্সি। তারা শিক্ষার্থীদের বের হয়ে যেতে বললে কিছু শিক্ষার্থী প্রক্টরের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়িয়ে যান। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে তাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রক্টর গোলাম রব্বানী। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গোলাম রব্বানী বলেন, তোমাদের সহযোগিতা করে কী আমরা ভুল করেছি? তোমরা আমাদের এমন স্মৃতি দিও না, যে স্মৃতি আমাদের কষ্ট দেয়। তোমাদের প্রতি আমাদের যে মমত্ববোধ সেটি কি আমরা এই দেড় বছরে প্রমাণ করিনি? তোমরা যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী আছ, তার পড়ো। আর যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী না, তারা আমাদের সহযোগিতা করো। তোমাদের বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো। কথা শেষ করে শিক্ষার্থীদের সেখানে রেখেই বের হয়ে যান প্রক্টর এবং গ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের কাছে গ্রন্থাগার সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে প্রক্টর বলেন, শিক্ষার্থীরা পড়তে চায় এটি ইতিবাচক দিক। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো। গ্রন্থাগারিক নাসির উদ্দীন মুন্সি বলেন, আমাদের সব আয়োজন থাকার পরও শিক্ষার্থীরা জোর করে ঢুকে পড়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই চাকরিপ্রত্যাশী। যেহেতু ঢুকে পড়েছে তাই আমরা আজ বের করে দেইনি। সামনের দিনে এটি নজরে রাখা হবে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। ছবিটি রোববার তোলা।

এদিকে রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দীর্ঘ দেড় বছর পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রন্থাগারে প্রবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্যবিধিসহ যথাযথ নিয়ম মেনে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে প্রবেশ করায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৈধ পরিচয়পত্র ও টিকার সনদপত্র দেখিয়ে গ্রন্থাগারে প্রবেশ করা শুরু করেন স্নাতক শেষ ও স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থীরা। গ্রন্থাগারের নিয়ম অনুযায়ী তারা বিকেল ৫টা পর্যন্ত গ্রন্থাগারে অবস্থান করতে পারবেন। তবে শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে কোনো বইপত্র নিয়ে যেতে পারেননি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের অবস্থা পরিদর্শনে যান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন মুন্সিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত স্বাস্থ্য সচেতন। আমি দেখে আনন্দিত যে সকলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছে। আশা করছি, সকলেই শিক্ষার্থীদের মতো এ ধরনের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। এ সময় তিনি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ দেই। কারণ আমরা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছি তারা সেভাবে লাইব্রেরিতে এসেছে। শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের এই সহযোগিতা সত্যিই প্রশংসনীয়। পুরো জাঁতি এখান থেকে শিখবে। শিক্ষার্থীদের পরিবারকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী বলেন, আজ থেকে গ্রন্থাগার খুললেও সেখানে সেখানে শুধু অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা করতে পারবে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে চাকরির বইপত্র, খাবার ইত্যাদি নিয়ে গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, গ্রন্থাগার ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আট দফা নির্দেশনা আছে সেগুলো শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হবে।