November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, May 9th, 2022, 9:39 pm

তদারকির অভাবে পরিত্যক্ত হয়ে উঠছে সম্ভাবনাময় নাসিরাবাদ ভারী শিল্পাঞ্চল

জেলা প্রতিনিধি:

তদারকির অভাবে পরিত্যক্ত হয়ে উঠছে সম্ভাবনাময় চট্টগ্রামের নাসিরবাদ ভারী শিল্পাঞ্চল। পাকিস্তান আমমে চট্টগ্রামে নাসিরাবাদ ভারী শিল্প এলাকা স্থাপন করা হয়। আর সেখানেই তৎকালীন অনেক বড় শিল্প গ্রুপের বিকাশ হয়েছিল। বর্তমানে বৃহৎ শিল্পোদ্যোক্তারা সেখানে জায়গার অভাবে চাইলেও কারখানা চালুর জন্য শিল্প প্লট বরাদ্দ নিতে পারছে না। আর যারা নিচ্ছে তাদের সংকীর্ণ জায়গায় কারখানা গড়ে তুলতে হচ্ছে। যদিও ওই শিল্পাঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি প্লটে স্থাপিত কারখানা এখন একপ্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আবার অনেক প্লটে শিল্প-কারখানার পরিবর্তে আবাসিক ভবন বা গুদাম দেখা যায়। এমনকি সেখানে ট্রাক স্ট্যান্ডও রয়েছে। কিন্তু তদারকির অভাবেই ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প এলাকাটির পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় বিএসআরএম, আরএসআরএম, বায়েজিদ স্টিলসসহ দেশের ইস্পাত খাতের নামি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি শিল্প গ্রুপের কারখানা রয়েছে। স্বাধীনতার অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত শিল্প এলাকাটি চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানাধীন বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় অবস্থিত। গণপূর্ত বিভাগ-১-এর তথ্যানুযায়ী ৩৯৬ দশমিক ৯৩ একর জমিতে শিল্প এলাকাটি স্থাপন করা হয়েছিল। ওই সময় শিল্প এলাকাটিকে ২৯৬টি প্লটে ভাগ করে বরাদ্দ দেয়া হয়। আর বরাদ্দকৃত জমির পরিমাণ ছিল ৩৫০ দশমিক ৩০ একর।
সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা অনেক কারখানাই বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। বেশ কয়েকটি কারখানা গুদাম হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। সেখানে কারখানার ভেতরে ট্রাক স্ট্যান্ড বানিয়ে ভাড়া দেয়ার নজিরও দেখা যায়। এমনকি অনেক কারখানার ভেতরের পুরনো ভবন এখন আবাসিক ভবনে রূপ নিয়েছে। বন্ধ কিছু কারখানার ফটক পেরিয়ে সেখানে খালি জমি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। শিল্প এলাকাটিতে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের আওতাভুক্ত মিলস ফার্নিশিংস লিমিটেড। ওই কারখানাটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ৬ বছরের বেশি সময় বন্ধ আছে ওরিয়ন বিস্কুট ফ্যাক্টরি। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানটির কারখানা ভবনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। তাছাড়া পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে অন্তত ১০টি কারখানার প্লট। সেগুলোয় কোনো সাইনবোর্ডও নেই। বন্ধ কারখানা সম্পর্কে স্থানীয়রাও তেমন কিছুই বলতে পারে না। তবে মাঝেমধ্যে শোনা যায় কারখানাগুলো চালু হবে। কিন্তু প্লটগুলো একপ্রকার পরিত্যক্ত দশায়ই পড়ে রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নাসিরাবাদ ভারী শিল্পাঞ্চলে এমন অনেক কারখানা রয়েছে, যেগুলো দেড়-দুই যুগ আগেই বন্ধ হয়ে প্লট পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওসব কারখানার বাইরে থেকে বড় গেট আটকানো দেখা গেলেও ভেতরে হয় খালি অবস্থায় পড়ে আছে, নয়তো তা গুদাম হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর এভাবে পড়ে থেকে ভবনগুলোতে ভাঙন ধরেছে। এমনকি রাতে মাদকের আড্ডা বসারও অভিযোগ রয়েছে। অথচ শিল্প এলাকাটির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়গুলো নিয়ে তদারকি করতে দেখা যায় না। ১৯৯০ সালের দিকে ১০৪ কাঠা জমি লিজ নিয়ে চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ ভারী শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠে ফেইম গার্মেন্টস নামের এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কারখানাটি ১৯৯৯ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায়। ওই কারখানাটি আজও চালু হয়নি। বর্তমানে ওই কারখানাটির তদারককারী সেটিকে গুদামঘর হিসেবে ভাড়া দিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক খাতে গড়ে ওঠা নাসিরাবাদ শিল্পজোন এলাকায় জমির মূল্য অনেক বেশি। নগরীর শিল্পজোনগুলোয় ভারী কারখানার জন্য জমি না পেয়ে শিল্পোদ্যোক্তারা মিরসরাই বা দক্ষিণ চট্টগ্রামের দিকে সরে যাচ্ছে। অথচ নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় অনেক শিল্প প্লট অনেকদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যারা ব্যবসা করবে না বা কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে তাদের কাছ থেকে প্লটগুলো ফিরিয়ে নিয়ে প্রকৃতপক্ষেই ব্যবসা করতে আগ্রহীদের বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় ওই শিল্প এলাকা থেকে প্রাপ্য রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি কারখানা চালানোর জমি না পেয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে উঠছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানান, নাসিরাবাদ ভারী শিল্প এলাকা পাকিস্তান আমলে অধিগ্রহণ করা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই শিল্পজোনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। গণপূর্ত বিভাগ ওই শিল্প এলাকার সামগ্রিক বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে। বর্তমানে ওই শিল্প এলাকায় ২৯৬টি প্লট আছে। আইন অনুযায়ী কারখানাগুলোকে প্লট বরাদ্দ দেয়া আছে। প্লট নিয়ে সেখানে কোনো সমস্যা নেই।