September 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 26th, 2023, 8:34 pm

তরুণদের দারুণ সুযোগ দেখছেন কোচ

অনলাইন ডেস্ক :

অনুশীলন শুরুর নির্ধারিত সময়ের প্রায় ঘণ্টাখানেক আগেই সিলেটের মাঠে হাজির বাংলাদেশ দল। রোববার দুপুরে মাঠে এসে ক্রিকেটাররা যখন ব্যস্ত গা গরম করায়, টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবালকে নিয়ে তখন সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে হাঁটা ধরলেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। উইকেটের পাশ দিয়েই এলেন, তবে কাছে গিয়ে উইকেটের চেহারাটা দেখলেন না বাংলাদেশের প্রধান কোচ। পরে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, এই উইকেট তাদের কাছে অচেনা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর আগে। বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচের জন্য এখানকার উইকেট, আবহ একটু অচেনা থাকা স্বাগতিক দলের জন্যও তাই অস্বাভাবিক নয়। তবে চ্যালেঞ্জের শেষ ওখানেই নয়।

বাংলাদেশ দলও তো কিছুটা নতুন চেহারার! একঝাঁক নিয়মিত ক্রিকেটার নেই এবার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। তবে এটিকে যতটা না চ্যালেঞ্জ, তার চেয়ে বেশি সম্ভাবনা হিসেবেই দেখছেন হাথুরুসিংহে। কোচের মতে, নতুনদের জন্য এটি বড় সুযোগ। গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের পর থেকে টানা সাদা বলের ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। এবার লাল বলের লড়াইয়ে ফিরছে তারা। সিলেটে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। এই সিরিজ দিয়ে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে যাত্রা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের।

টানা ওয়ানডে খেলার পর লাল বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব একটা সহজ নয়। বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরেই জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) শেষ রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে নেমে যান মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, হাসান মাহমুদরা। শুরু থেকেই জাতীয় লিগে খেলেছেন মুমিনুল, তাইজুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, নাঈম হাসানরা। কিউইদের বিপক্ষে নামার আগে জাতীয় লিগের এই অভিজ্ঞতার জোরেই নিজেদের প্রস্তুতি সারার বার্তা দিলেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। “(প্রস্তুতির জন্য আমরা) এনসিএল ব্যবহার করেছি। যারা বিশ্বকাপে ছিল, তারা দেশে ফিরে এনসিএলের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ খেলেছে। প্রায় সব ব্যাটসম্যান এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। অন্যরাও আগেই এনসিএল খেলছি। যেমনটা আপনারা জানেন, বিভিন্ন কারণে এটি নতুন চেহারার বাংলাদেশ।

আমার মনে হয়, যতটা সম্ভব আমরা প্রস্তুত এবং টেস্ট সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।” নতুন চেহারার এই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কও নতুন একজন। আঙুলের চোটে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও ছুটি নেওয়ায় সহ-অধিনায়ক লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে এই সিরিজের দায়িত্ব পেয়েছেন শান্ত। আপাতত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেলেও, দীর্ঘ মেয়াদে শান্তই হতে পারেন বাংলাদেশের নিয়মিত অধিনায়ক। তাই এই সিরিজটি তার অধিনায়কত্বের জন্যও অন্যরকম সুযোগ মনে করেন হাথুরুসিংহে। “নতুন অধিনায়কের জন্য এটি সুযোগ, নিজের নতুন লিডারশিপ গ্রুপ, নেতৃত্বের ধরন তৈরি করার। এটি ভিন্ন বিষয়। তার জন্য এটি যেমন সুযোগ, তেমনি অন্য ক্রিকেটারদের জন্যও সুযোগ, যেভাবে সে (শান্ত) নেতৃত্ব দেয়, তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার। আমি এসব পরিবর্তন নিয়ে খুবই রোমাঞ্চিত।” নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে স্বাগতিকদের অনুপ্রেরণার বড় উৎস হতে পারত তাদের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজ। গত বছরের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডের মাঠে খেলতে গিয়ে সিরিজ ড্র করে ফেরে বাংলাদেশ।

মুমিনুলের নেতৃত্বে এবাদত হোসেনের দারুণ বোলিংয়ে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট ৭ উইকেটে জেতে তারা। একই দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে অবধারিতভাবেই আসে ওই ম্যাচের প্রসঙ্গ। তবে দলের প্রধান কোচ প্রায় দুই বছর আগের ওই সিরিজে ফিরতে চান না। নতুন লড়াইয়ে নামার আগে হাথুরুসিংহে জানালেন, তার ভাবনায় এখন সিলেটের উইকেট। “আপনারা সবাই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট নিয়ে কথা বলছেন। কেন? কত আগের কথা সেটা! অন্য এক দেশে হয়েছিল সেটি। এটি পুরো ভিন্ন এক ম্যাচ। আমরা এখানে খুব বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলিনি। একটি মোটে টেস্ট খেলেছি, যদি ভুল না করে থাকি। আমাদের জন্যও এটা নতুন। আমরা জানি না উইকেট কেমন আচরণ করবে। কারণ, আমাদের (এখানে খেলার) ইতিহাস নেই। এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবই অজানা।” সিলেটের মাঠে একমাত্র টেস্ট হয়েছে ২০১৮ সালে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৫১ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচ খেলা স্রেফ ৫ জন ক্রিকেটার আছেন এবারের স্কোয়াডে। চোট ও ছুটির কারণে নেই তামিম ইকবাল, সাকিব, ইবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ, লিটনরা। ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞ বলতে স্রেফ মুশফিক ও মুমিনুল। বোলিং বিভাগে তাইজুলের সঙ্গে স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। স্কোয়াডের বাকিদের টেস্ট খেলার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের ছাড়া নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই সহজ হবে না, জানেন হাথুরুসিংহেও। তবে দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা থেকে এটিকেই বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। “একসঙ্গে এতটা অভিজ্ঞতা হারানো একটা দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেটা যে কোন দলের জন্যই। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য, কারণ ওরা সব সংস্করণেই বাংলাদেশের হয়ে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে খেলছে। কেউ কেউ ১০ বছর।

একদিক থেকে এটা সবার জন্য সামনে তাকানোর সুযোগ, তরুণরা কেমন করে তা দেখার সুযোগ।” “আমি মনে করি, কিছুকিছু ক্রিকেটার যারা দীর্ঘ দিন ধরে খেলছে, তাদের বাইরে ভাবার এখনই সময়। তারা তো সবসময় খেলবে না। তবে নানা কারণে এটি হচ্ছে। আমি মনে করি, এটি রোমাঞ্চকর এবং তরুণ কয়েকজনের জন্য সুযোগ নিজের নামে পরিচিত হওয়ার ও লম্বা ক্যারিয়ার গড়ার।” হাঁটুর অস্ত্রোপচার করা ইবাদত, কাঁধের চোটে থাকা তাসকিনদের অনুপস্থিতি পেস বোলিংয়ে তৈরি করেছে শূন্যতা। তাই দায়িত্ব বেড়েছে স্কোয়াডে থাকা অন্য তিন পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদের ওপর।

ম্যাচের দুই দিন আগে অনুশীলনেও এই তিন পেসারের সঙ্গে সেন্টার উইকেটে বাড়তি সময় কাটাতে দেখা গেল হাথুরুসিংহেকে। সংবাদ সম্মেলনেও তাদের প্রতি আস্থার কথা জানালেন প্রধান কোচ। “ওরা (তাসকিন, ইবাদত) আমাদের সেরা বোলার। আবারও বলছি, এটা অন্যান্যের জন্য এগিয়ে আসার সুযোগ। দীর্ঘদিন ধরে এক সেট বোলার নিয়েই এগোনো যাবে না, ওদের ওপর নির্ভর করা যাবে না। স্কোয়াডে থাকা খালেদ, শরিফুল ও হাসান মাহমুদের জন্য এটি সুযোগ। হাসান এখনও টেস্ট খেলেনি। এটি তাদের জন্য রোমাঞ্চকর। তারা কেমন করে তা, দেখতে মুখিয়ে আছি।”