অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের অনুশীলন তখন শেষের পথে। মূল ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের পালা প্রায় শেষ। নেটে ব্যাট করছিলেন তাইজুল ইসলাম। তার একটি শট দেখে হাততালি দিয়ে উঠলেন কাছেই দাঁড়ানো অ্যালান ডোনাল্ড ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। তাইজুলের শটে মুগ্ধ বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ ও প্রধান নির্বাচক! তাইজুলকে নিয়ে মুগ্ধতা অবশ্য বাংলাদেশ দলের প্রায় সবারই। শুধু ওই শটে নয়, তার সামগ্রিক মানসিকতা নিয়েই। স্রেফ একটি সংস্করণেই তিনি স্কোয়াডে থাকেন। সেখানেও তাকে আবার অনেক সময়ই একাদশে জায়গা দেওয়া যায় না দলীয় ভারসাম্যের কারণে। তার পরও তিনি দলে সম্পৃক্ত থাকেন প্রবলভাবে। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যেমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন তাইজুলের ইতিবাচকতার। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বাংলাদেশের অনুশীলনে তাইজুলকে পাওয়া গেল বরাবরের রূপে। নেট ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময়ই তিনি দারুণ সিরিয়াস। বাউন্সারে মাথা সরিয়ে নিচ্ছিলেন, বল প্যাডে লাগলে দেখে নিচ্ছিলেন এলবিডব্লিউ হলেন কি না। এর আগে স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে লম্বা সময় বোলিংটাও ঝালিয়ে নেন তিনি। সাকিব আল হাসান দলে থাকলে একাদশে তাইজুলের জায়গা নিয়ে বরাবরই জাগে অনিশ্চয়তা। তবু নিবেদনে কখনও ঘাটতি দেখা যায় না, তার অনুশীলনে ঘাম ঝরাতে পিছপা হন না। অন্য দুই সংস্করণের ক্রিকেটে নিয়মিত নন তাইজুল। ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক সময়ে দলে ফিরলেও টি-টোয়েন্টি থেকে বহু দূরে তিনি। শুধু টেস্ট ক্রিকেটেই অভিষেকের পর থেকে টানা খেলছেন ৩০ বছর বয়সী এ পেসার। কিন্তু উইকেট কন্ডিশন বিবেচনায় দলের কম্বিনেশন ঠিক রাখতে তাকেও মাঝেমধ্যে থাকতে হয় একাদশের বাইরে। এই বাস্তবতায় হতাশা কাজ করা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাইজুলের ক্রিকেটীয় আচরণে কখনও হতাশার তেমন ছাপ দেখা যায়নি। যখনই তিনি টেস্টের জন্য দলে ফেরেন, যে কোনো কিছুতে নিজের শতভাগ উজাড় করে দেন। সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধান কোচ বললেন, তাইজুলের প্রাণবন্ত উপস্থিতি দলকে জাগিয়ে তোলে সবসময়ই। “শুধু এক সংস্করণে খেলা ক্রিকেটারদের জন্য কাজটি কঠিন। তবে তাইজুলের ইতিবাচক বিষয় হলো, তার মনোভাব দারুণ এবং সবসময় বাংলাদেশের হয়ে খেলার তীব্র তাড়না তার রয়েছে। সে যখনই ফেরে, ইতিবাচক থেকে দলকে সবসময় ১০ শতাংশ বেশি উজ্জীবিত করে।” দেশের মাটিতে তাইজুল বরাবরই ধারাবাহিক পারফর্মার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশেও যে ভালো করতে শুরু করেছেন তিনি, মনে করিয়ে দেন ডমিঙ্গো। “এ দল হোক কিংবা ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্ট, সে অনেক বোলিং করে। সবসময় উন্নতির খোঁজে থাকে। আমরা যখন বাংলাদেশে খেলি, সে আমাদের জন্য ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে কাজ করে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সেরা বোলারদের একজন সে। দেশের বাইরেও সে ভালো খেলতে শুরু করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭ উইকেট (৯টি) পেয়েছে।” এখন পর্যন্ত ৩৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে তাইজুলের শিকার ১৫৮ উইকেট। ঘরের মাঠে ২৫ ম্যাচে তার উইকেট ১২০টি, বিদেশে ১৩ ম্যাচে ৩৮ উইকেট। তবে গত এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে খেলা একমাত্র টেস্টে দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নেন তাইজুল। গত বছর শ্রীলঙ্কায়ও নেন ইনিংসে ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের প্রথম ৩৮ টেস্টে সাকিবের নামের পাশে ছিল ১৪১ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৫ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ১৩৫ উইকেট। তবু টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে তিন নম্বরে আসে তাইজুলের নাম। ডানহাতি-বাঁহাতি বৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে সাকিবের সঙ্গে আগে ভাবা হয় মিরাজের কথা। প্রধান কোচ ডমিঙ্গোও তুলে ধরলেন সেই বাস্তবতা। “তাইজুল আমাদের বোলিং লাইনআপের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সমস্যা হলো, যখন সাকিব খেলে তখন তিনজনকে (সাকিব, মিরাজ ও তাইজুল) একসঙ্গে নেওয়া খুব কঠিন। তবে তার সামনে অনেক খেলা আছে। বাংলাদেশের হয়ে লম্বা ক্যারিয়ার পড়ে রয়েছে তার।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা