নিজস্ব প্রতিবেদক:
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি তামাকবিরোধী প্রচারণায় আরও জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। শনিবার (৯ অক্টোবর) জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে ‘জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি, তামাক কোম্পানি আগ্রাসন প্রতিহত করি’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। এদিন দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট। সেমিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, আমি আশাবাদী, বর্তমান অবস্থারও পরিবর্তন হবে। একসময় পাবলিক বাসে সিগারেটের ধোঁয়ায় বসা যেত না। এখন সেটার পরিবর্তন হয়েছে। কেউ ধূমপান করলে জরিমানাও করা হচ্ছে। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কেম্পানির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বলা হচ্ছে, ২০৪০ সালে তামাক নির্মূল করা হবে। টোব্যাকোর শেয়ার না থাকলে এখান থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে। আজকে এই শেয়ারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তারা সুবিধা পাচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু উৎপাদনকারীরা দেখি তাদের সঙ্গে মিটিং করে। তাই টোব্যাকোর শেয়ার, লাইসেন্স ও উৎপাদন বন্ধ করা উচিত। কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, তামাকের বিরুদ্ধে আমরা কিছু লোক চিৎকার করছি। কিন্তু পত্রপত্রিকায় প্রচার হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় বিষয়গুলো এলে কাজে আসতো। এ জন্যই বলা হয়, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতার জন্য এটার ভূমিকা অনেক বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, তামাকের চাহিদা ও যোগান নিয়ন্ত্রণ করার অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে তামাক নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হবে। এগুলোর প্রচারও জরুরি। যদি আরও প্রচার করা যায় তবে আরও বেশি সচেতনতা বাড়বে। তিনি বলেন, তামাক উৎপাদনকারীদের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা প্রয়োজন। এরজন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা দরকার। এতে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়কারী ও অনুষ্ঠানের সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকের প্রসারের জন্য আধুনিকতার একটি প্রভাব রয়েছে। ১৯৯৯ সাল থেকে তামাকবিরোধী এ কাজ শুরু হয়, যার ফলে ২০০৫ সালে আইন হয়। বাংলাদেশে একমাত্র আইন, যা নিয়ে কোথাও না কোথাও কাজ হয়। আইন হওয়ার আগে রাস্তায় তামাকের বিজ্ঞাপনে বড় বড় বিলবোর্ড ছিল। এ আইনের ফলে সেটা বন্ধ হয়েছে। প্রতিকার পেয়েছি বাসে ধূমপান থেকে। আইনটি কিছুটা সুরক্ষা দিয়েছে। বাস্তবায়নও হচ্ছে, তবে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এটি নিয়ে আরও কাজ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, তামাক শিল্প থেকে সরকারের শেয়ার বন্ধ করা উচিত। একদিকে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশ তামাকমুক্ত করার কথা বলে অপরদিকে শেয়ার নিয়ে থাকা ঠিক নয়। কোম্পানিনগুলো শেয়ার দেখিয়ে নানা কাজ করছে। করোনাকালেও তামাককে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেখানো হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। তবে ২০৪০ সালের পর তামাক নিষিদ্ধ পণ্য হবে আশা করছি। হামিদুল ইসলাম হিল্লোলের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ও মাদকবিরোধী সংগঠন প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ প্রমুখ।এর আগে তামাক কোম্পানির আগ্রাসন ও অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে মাদকবিরোধী সংগঠন প্রত্যাশা। মানববন্ধনে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ বলেন, বহুজাতিক ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকোসহ দেশীয় তামাক কোম্পানিগুলো রাজধানীসহ সারাদেশের রাস্তা-ফুটপাত দখল করে হাজার হাজার পয়েন্ট অব সেল বা বিড়ি-সিগারেটের টঙ দোকান স্থাপন করে সেখানে সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূতভাবে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এতে নতুন প্রজন্ম মাদকের গেইটওয়ে তথা তামাকে আসক্ত হয়ে মাদকাসক্তে পরিণত হচ্ছে। ফলে দেশের মেধাবী তরুণরা জাতির সম্পদে রূপান্তর না হয়ে বোঝায় পরিণত হচ্ছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম