October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, June 23rd, 2023, 9:34 pm

তামাদি হয়ে যায় জীবন বীমা খাতের অধিকাংশ পলিসি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তামাদি হয়ে যায় জীবন বীমা খাতের অধিকাংশ পলিসি। গত তিন বছরে দেশে জীবন বীমার দাবি পরিশোধের হার ক্রমাগত কমছে। ২০১৮ সালে বীমা দাবি অনিষ্পন্ন ছিল সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। এরপর থেকে বীমা দাবি অনিষ্পন্নের হার ঊর্ধ্বমুখী। ২০২২ সালে এসে যা দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশে। টাকার হিসাবে গত বছর অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে বীমা দাবি পরিশোধের হার ছিল ৭১ দশমিক ৯১ শতাংশ। এরপরের বছরগুলোয় বীমা দাবি পরিশোধের হার ক্রমাগত বাড়ছিল। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ বীমা দাবি ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ পরিশোধ করা হয়। এরপর থেকে ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে বীমা দাবি পরিশোধ। ২০১৯ সালে তা দশমিক ৫১ শতাংশ কমে ৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশে দাঁড়ায়। পরবর্তী বছরও আরো কমে ৮৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, ২০২১ সালে এসে তা ৭০ দশমিক ৪০ শতাংশে দাঁড়ায়। সর্বশেষ ২০২২ সালে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়, যা বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২০ সাল থেকে অর্থের হিসাবে প্রতি বছরই বড় অংকের বীমা দাবি অপরিশোধিত থেকে যাচ্ছে। ২০০৯-১৯ পর্যন্ত অনিষ্পন্ন দাবির অর্থের পরিমাণ ছিল প্রতি বছর ৪০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে। গত তিন বছরে এ সংখ্যা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০২০ সালে ১ হাজার ১৮২ কোটি, ২০২১ সালে ৩ হাজার ৪৯৯ কোটি এবং গত বছর ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। সূত্র জানায়, দেশের জীবন বীমা খাতে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৫টি। কিছু প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের পলিসির বিপরীতে পর্যাপ্ত বীমা দাবি নিষ্পত্তি হচ্ছে না। নিষ্পত্তির এ হারকে সন্তোষজনক নয় বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি (বিআইএ)। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণেই দাবি পরিশোধের হার ক্রমাগত নিম্নমুখী। এসব প্রতিষ্ঠানের তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা এবং নিজেদের অনিয়মের কারণে অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না তারা। গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করতে না পারায় এরই মধ্যে তিনটি বীমা প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

সূত্র আরো জানায়, ২০২২ সালে মোট বীমা দাবি আসে ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৯৩০টি। এর বিপরীতে পরিশোধ করা হয় ১৮ লাখ ৯২ হাজার ৯৯২টি। সে হিসাবে অনিষ্পন্ন থেকে গেছে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ বীমা দাবি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করা হয়েছে গোষ্ঠী ও স্বাস্থ্য দাবি। এরপর রয়েছে মৃত্যু দাবি, সার্ভাইভাল বেনিফিট দাবি ও মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি। সবচেয়ে কম পরিশোধ করা হয়েছে সারেন্ডার দাবি। ওই বছর ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ দাবির মধ্যে ৮৫ হাজার ১০২টি দাবি নিষ্পন্ন করা হয়। অথচ ২০২১ সালে সারেন্ডার দাবি নিষ্পত্তির হার ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগের বছরগুলোয়ও সারেন্ডার দাবি ৯৬ শতাংশেরও বেশি নিষ্পত্তি করা হয়। ২০২২ সালে জীবন বীমায় মোট দাবি ছিল ১৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। দাবি পরিশোধ করা হয় ৯ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ১১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বীমা দাবি থাকলেও পরিশোধ করা হয় ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ৭ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা বীমা দাবি করলে ৬ হাজার ৭৪১ কোটি টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়। গত ১৪ বছরে অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ দাবি অনিষ্পন্ন ছিল ২০১৮ সালে।

অন্য বছরগুলোয় এ হার বাড়তে থাকে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ দাবি অনিষ্পন্ন থেকে যায় ২০২২ সালে। ২০০৯ সালে দাবি অনিষ্পন্ন ছিল ২৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। পরের বছর ২০১০ সালে ২৪ দশমিক ৫৮, ২০১১ সালে ২৩ দশমিক ৯৫, ২০১২ সালে ২৩ দশমিক ৭৯, ২০১৩ সালে ২১ দশমিক ৭২, ২০১৪ সালে ১৯ দশমিক ৫৯, ২০১৫ সালে ১৪ দশমিক ৭১, ২০১৬ সালে ১৪ দশমিক ১২, ২০১৭ সালে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ দাবি অনিষ্পন্ন থাকে। ২০১৮ সালের পর অনিষ্পন্ন দাবির হার আবার বাড়তে থাকে। এদিকে এক গবেষণার জন্য ৩৫টি বীমা কোম্পানির কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হলে মাত্র ২৬টি প্রতিষ্ঠান তথ্য সরবরাহ করে।

ওই গবেষণায় দাবি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহে বিলম্ব, মৃত্যুসনদ দিতে বিলম্ব, স্বাক্ষরহীন দাবিপত্র, নমিনি উল্লেক্য না থাকা, তামাদি হয়ে যাওয়া, এজেন্টের সহযোগিতা না থাকার মতো বিষয়গুলো বীমা দাবি নিষ্পত্তি না হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া পলিসি নবায়ন, কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা না থাকার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের দায়ভার পুরো শিল্পের ওপর পড়ে। যার কারণে পর্যাপ্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালক এসএম ইব্রাহিম হোসাইন জানান, জীবন বীমা খাতের অধিকাংশ পলিসি তামাদি হয়ে যায়। ১০০টি পলিসি গ্রহণ করা হলে তার মধ্যে মাত্র ৪০টি পলিসি টিকে থাকে। যার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ফান্ড গঠন করতে পারে না। এর ওপর প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও অনেক বেশি। ফান্ড গঠন করতে না পারার কারণে তাদের গ্রাহকের অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করার কোনো সুযোগ থাকে না।