May 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 17th, 2023, 8:52 pm

তিন বিভাগেই ব্যর্থ সৌম্য

অনলাইন ডেস্ক :

স্কয়ার লেগ থেকে মিড উইকেট পর্যন্ত লম্বা সীমানা অরক্ষিত। মিডিয়াম পেসের গতি নিয়ে তার পরও বারবার শর্ট বল করছিলেন সৌম্য সরকার। ফুল টস আর হাফ ভলি তো ছিলই। ধারাভাষ্যকার ক্রেইগ ম্যাকমিলান একপর্যায়ে বলতে বাধ্য হলেন, ‘পাগলাটে বোলিংৃ।’ সৌম্য অবশ্য বিশেষজ্ঞ বোলার নন, কাঠগড়ায় তাকে দাঁড় করানো কঠিন। কিন্তু মূল কাজ যেটি, সেই ব্যাটিংয়ে তিনি ব্যর্থ আরও চরমভাবে। ও হ্যাঁ, ফিল্ডিংয়ে ক্যাচও ছেড়েছেন! সবকিছুর যে ফলাফল, সেটিকে বলা যায় ভয়ঙ্কর প্রত্যাবর্তন। ভুলে যাওয়ার মতো এক ম্যাচ খেললেন ৩০ বছর বয়সী ক্রিকেটার। সৌম্যর দলে ফেরার প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন ও সমালোচনার শেষ ছিল না। ফেরার পর তার প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স সবকিছুকে উসকে দিল আরও। যদিও এই দফায় ফেরার পর কেবল একটি ম্যাচই খেললেন। এখনই বিচার করা কঠিন। নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরার সুযোগ হয়তো পাবেন আরও। তবে অতীতে তাকে নিয়ে এতবার হতাশায় পুড়তে হয়েছে যে, এবার প্রথম ম্যাচের পরই সেই দহন অনুভূত হচ্ছে তীব্রভাবে। সৌম্যর সবশেষ ম্যাচের স্কোর শূন্য।

এটা এই ম্যাচের আগের চিত্র যেমন, তেমনি এই ম্যাচের পরের বাস্তবতাও। গত বিশ্বকাপের ঠিক আগে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই দুই বলে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। রোববার ডানেডিনে বল খেললেন আরও দুটি বেশি, রান সেই শূন্যই। ওয়ানডেতে সবশেষ ৫ ম্যাচে শূন্যতে ফিরলেন ৩টিতেই। অথচ ম্যাচের প্রেক্ষাপট তার জন্য ছিল আদর্শ। তিন দফা বৃষ্টিতে ম্যাচ নেমে আসে ৩০ ওভারে। নিউ জিল্যান্ড পৌঁছে যায় রান পাহাড়ে। সৌম্যকে ওপেনিংয়ে নামানো হয়েছিল নিশ্চয়ই ‘ফ্রি লাইসেন্স’ দিয়ে। তার কাজ একটিই, দ্রুত রান তোলা। তাকে নিয়ে এখন অবস্থা এমন যে, দ্রুতগতির ৩০ রানের ইনিংস খেললেও সেটিকে হয়তো ধরে নেওয়া হতো একটা প্রাপ্তি।

কিন্তু তিনি তো এটুকুও করতে পারলেন না। আউট হলেন সেই পরিচিত দৃশ্যের মঞ্চায়ন ঘটিয়ে। স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ। এই ম্যাচের আগে সবশেষ ১৬ ওয়ানডে ইনিংসে তার ফিফটি স্রেফ ১টি। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাদা বলের কোনো টুর্নামেন্টেই তিনি রান করেননি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরে ১১ ইনিংস খেলে তিনি ২৯৩ রান করেছিলেন মাত্র ২৬.৬৩ গড়ে। টি-টোয়েন্টিতে গত বিপিএলে ১২ ইনিংসে ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন মোটে একবার, মোট ১৭৪ রান করেছিলেন স্রেফ ১৪.৫০ গড়ে।

তার পরও তাকে এবার নিউ জিল্যান্ড সফরের দলে ফেরানো হয়। তখন প্রচুর প্রশ্ন উঠেছিল এটা নিয়ে। নির্বাচক কমিটির পক্ষ থেকে হাবিবুল বাশার বলেছিলেন, নিউ জিল্যান্ডে সৌম্যর আগের খেলার অভিজ্ঞতার কথা। যদিও নিউ জিল্যান্ডে আগে ৯ ওয়ানডে খেলে সৌম্যর ব্যাটিং গড় ছিল ১৫.৪৪। অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি এই ম্যাচে। প্রশ্ন তাই আবারও উঠতে বাধ্যই। বোলিং যদিও সৌম্যর মূল কাজ নয়, তার পরও আঙুল তোলা যায় বোলিংয়ের দিকেও। কারণ, তাকে দলে নেওয়ার পেছন নির্বাচকরা বলেছিলেন অলরাউন্ড সামর্থ্যরে কথাও। তার মানে, বোলিংয়ে তাকে নিশ্চিত একটি ‘অপশন’ হিসেবেই দেখেছে দল।

সিরিজ শুরুর আগের দিন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তো এতটাও বলেছেন যে, ব্যাটে-বলে সৌম্যকে সাকিব আল হাসানের মতো ভূমিকায় দেখার আশা করেন তিনি। অথচ বল হাতে এ দিন তিনি ৬ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। রান তিনি হজম করতেই পারেন। তাকে বোলিং করতে হয়েছে শেষ দিকে, তখন উইল ইয়াং, টম ল্যাথাম, মার্ক চ্যাপম্যানরা রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছেন। তাদেরকে আটকানো সৌম্যর জন্য কঠিন। মূল বোলার হয়েও তো মুস্তাফিজুর রহমান ৬ ওভারে ৪৭ রান দিয়েছেন। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের ৫ ওভার থেকে এসেছে ৫৩।

তবু সৌম্যর দিকে আঙুল তুলতে হচ্ছে একদমই দিশাহীন বোলিংয়ের জন্য। লাইন-লেংথে ধারাবাহিক হতে পারেননি, পরিকল্পনার কোনো ছাপ রাখতে পারেননি, ফিল্ডিং সাজানো অনুযায়ী বোলিং করতে পারেননি একেবারেই। ব্যাট-বলের অনেক কিছু তবু নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে তো তেমন কোনো দায় দেওয়ার সুযোগ সামান্য। সৌম্য প্রথম গড়বড় করেছেন সেখানেই। ১৮ রানেই জীবন দিয়েছেন ল্যাথামকে। স্লিপে ক্যাচটি খুব কঠিন কিছু ছিল না। সেই ল্যাথামই জীবন পেয়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। ফেরার ম্যাচে তাই সব দিকেই ব্যর্থ তিনি। যে প্রক্রিয়ায় তাকে ফেরানো হয়েছে, তার পারফরম্যান্সে বাড়তি নজর থাকবে প্রতি ম্যাচেই। প্রথম ম্যাচে নিজের পক্ষে তিনি জোগাড় করতে পারেননি সামান্যতম রসদও।