November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 26th, 2021, 7:45 pm

তিস্তা’র অব্যাহত ভাঙ্গনে নিরালম্ব কুড়িগ্রামবাসী

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

তিস্তা নদীকে বলা হয় পাগলি বা পাগলা নদী। নদীটি কখন কী আচরণ করে, বলা কঠিন। দুই পাড় উজাড় করে তিস্তা নদী ক্রমাগত প্রস্থে বাড়ছে। ২ কিলোমিটারের নদী এখন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। তিস্তার ভাঙন রোধে আজ পর্যন্ত সরকার কোনো দিন কোনো বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এমনকি যাঁরা ভাঙনের শিকার, তাঁদের পাশেও সরকার নেই। ২৩৪ বছরের ইতিহাসে এ নদীর পরিচর্যা করারও তেমন কোনো ইতিহাস জানা যায় না।
পাগলি তিস্তার চিরাচরিত ভাঙ্গনের পাশাপাশি ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদীর অব্যাহত ভাঙনের শিকার হয়ে এবার বসতভিটা হারিয়েছেন কুড়িগ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।
এ সকল নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকাস্থ কুড়িগ্রামবাসীর আয়োজনে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে এই এলাকায় এখন পর্যন্ত স্কুল, মসজিদ-মন্দিরসহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি, রাস্তা ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন প্রায় দুই হাজার পরিবার। এসব পরিবারের অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তা ও অন্যের জমিতে।
তারা বলেন, গত দুই বছরে কুড়িগ্রাম জেলার এ সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। শুধু রাজারহাটেই চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মেজর (অব.) আবদুস সালাম, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রেজানুর রহমান, পরিবেশবিদ ও নদী গবেষক শেখ রোকন, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও বাপার নির্বাহী সদস্য ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, কুড়িগ্রাম সমিতি, ঢাকার মহাসচিব সাইদুল আবেদীন ডলার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন, রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি (আরডিজেএ) ঢাকায় সভাপতি মোকছেদুর রহমান মাকসুদ, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদ (সিসাপ)-এর সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার রায় এবং কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইন ঢাকা (কেএসডব্লিউএডি)-এর সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ইসিয়াম।
কুড়িগ্রামের করুণ দশাঃ কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশাম নামক স্থানে নদীর প্রায় এক কিলোমিটার আগেই কাদামাটির ওপর গড়ে উঠেছে নতুন অনেক ঘর। বসতভিটা হারিয়ে এভাবেই কাদামাটির ওপর ঘর তৈরি করেই দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। তাদের ভাষ্য, ‘সোগ নদীত ভাসি গেইচে। কোন্টে থাকমো?’
তিস্তার রুদ্ররোষের শিকার কুড়িগ্রামের এই নিরালম্ব মানুষগুলোর অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকানো যায় না। এই কষ্ট যদি আমাদের জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের কর্তারা উপলব্ধি করতেন, তাহলে তাঁরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। যাঁদের হাতে সমাধান, তাঁরা থাকেন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাড়িগাড়িতে। নদীতীরবর্তী বাস্তবতা থেকে যোজন যোজন কিলোমিটার দূরে।
গতিয়াশামের প্রায় দেড় হাজার বাড়ি চলতি বর্ষায় নদীগর্ভে বিলীন। আরও কত এলাকা এবার নদীগর্ভে বিলীন হবে তা অনুমান করা যাচ্ছে না। গতিয়াশামের ওপর দিয়ে এখন তিস্তা প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষে যেন খবর নেওয়ার কেউ নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘নদী তো এমনিতেই ভাঙে, তার ওপর গত বছর মেশিন দিয়ে এক জায়গা থাকি অনেক বালু তুলছে। সেই জন্যে বেশি ভাঙছে নাকি কে জানে।’
এ বছর রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টি তুলনামূলক কম ছিল। উজানের পানিও আসে কয়েক দিন পরপর। পানি কম হলেও ভাঙন কম নেই, বরং কিছুটা বেশি। প্রতিবছর কতগুলো বাড়ি ভাঙে, কত আবাদি জমি নদীতে যায়, কোনো পরিসংখ্যান নেই। অনুমান করা যায়, ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাড়ি বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাখো গাছ ভেসে যায় নদীতে। বলতে গেলে ক্ষতির অর্থমূল্য শত শত কোটি টাকা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদের মতে, ‘তিস্তার ভাঙন রোধে সরকারের কার্যকর কোনো পদেক্ষপ নেই। অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দারা চাঁদা তুলে ভাঙন ঠেকাতে কাজ করে থাকেন। যেমন এ বছরেই রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনিয়ার চরে স্থানীয় লোকজন প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা তুলে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। বর্ষার প্রথম বৃষ্টি আর উজানের ঢলেই সেটি ভেসে গেছে। সরকার প্রতিবছর বন্যার মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে বালুর বস্তা ফেলার মতো সান্ত¡নামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এতে কখনোই ভাঙন বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিস্তার এক স্থানে ভাঙন বন্ধ হলে আরেক স্থানে ভাঙে। আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, বস্তায় উপকার হয়েছে। বাস্তবে শুধু টাকাই নষ্ট। ভাঙন যা হওয়ার তা-ই হয়।‘
তিনি আরও জানান, এ বছর বর্ষার শুরুতেই খবর পাচ্ছিলাম, তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমানসহ কয়েকজন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় গিয়েছিলাম। ওই স্থানে অপর প্রান্তে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। সুন্দরগঞ্জের খানিকটা এলাকা পড়েছে প্রায় আট কিলোমিটার প্রস্থ তিস্তার বাঁ দিকে চিলমারী প্রান্তে কাশিমবাজারে। কাশিমবাজারে তখন তীব্র ভাঙন। যেহেতু গাইবান্ধার অংশে ভাঙছে, তাই কুড়িগ্রাম কিংবা লাগোয়া উলিপুর-চিলমারী উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি তখন পর্যন্ত তাদের কোনো সহায়তা দেয়নি। আমরা যখন গিয়েছিলাম, তত দিন পর্যন্ত সেখানে তাঁদের কেউ পরিদর্শনেও যাননি।
নদী রক্ষার দায়িত্ব মূলত কারঃ ছোট-বড় মিলে দেশে নদীর সংখ্যা দুই সহ¯্রাধিক। অথচ নদী দেখভাল করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয় নেই। নদীর অংশবিশেষের সঙ্গে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় যুক্ত। নদী রক্ষায় মন্ত্রণালগুলোর কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যায় না। নদীর সামগ্রিক কাজের তদারকির জন্য একক কোনো মন্ত্রণালয় নেই, যার মাধ্যমে সমন্বয়পূর্বক নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ করা হবে।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে উত্তরের মানুষ বিশেষ করে কুড়িগ্রামের মানুষের হতাশা এখন চরমে। কৃষকই শুধু নয়, পানির অভাবে প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্রের ওপর যে প্রভাব পড়েছে তা থেকে অঞ্চলটিকে রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপের দাবি উঠেছে সবমহলে। সমস্যা সমাধানে চীনের প্রস্তাবিত আট হাজার কোটি টাকার তিস্তার সমন্বিত মহাপরিকল্পনাকে সমাধান মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত বর্ষায় ৫ দফার বন্যায় বিপন্ন জনপদে বোরো আবাদ করে ঘুরে দাঁড়াবার যখন আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে কৃষক, তখন তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ শূন্যের কোঠায়। মরা তিস্তায় ধু ধু চরের তপ্ত বালিতে শুধু কৃষক নয় ক্ষুব্ধ জেলে ও মাঝিরাও।
তারা বলেন, খরার সময় পানি দেয় না, কিন্তু বন্যার সময় রাতারাতি পানি ছেড়ে দেয়। পানি না থাকলে চাষ হবে কি করে। মানুষ বাঁচবে কিভাবে।
অভিন্ন নদীর পানিতে ভাটির মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান সংশ্লিষ্টদের। চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর তাগিদ দেন তারা।
রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদও চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান। তাঁর ভাষ্য, তিস্তার বাঁচা মরার ওপর এ অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের জীবন নির্ভর করছে।
চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনাঃ এই প্রকল্পটিতে তিস্তার উপকূল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিনের যে দ্বন্দ্ব রয়েছে সেটি কাটিয়ে শুকনো মৌসুমে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের ভাষ্য, প্রকল্পটিতে এখনো পর্যন্ত যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে নদীগর্ভে ড্রেজিং করা, রিভেটমেন্ট বা পাড় সংস্কার ও বাধানো এবং ভূমি পুনরুদ্ধার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ‘তিস্তার ব্যাপ্তি কোন এলাকায় হয়তো পাঁচ কিলোমিটার, কোথাও দেড় কিলোমিটার বা কোথাও তিন কিলোমিটার আছে। সেক্ষেত্রে এই ব্যাপ্তি কমিয়ে দেড় বা দুই কিলোমিটার কিংবা প্রকল্পের নকশায় যা আছে সে অনুযায়ী করা হবে।’
এর ফলে তিস্তার পারে থাকা শত শত একর জমি বা ভূমি পুনরুদ্ধার হবে যা ভূমিহীন মানুষ কিংবা শিল্পায়নের কাজে লাগানো হবে। গভীরতা বাড়িয়ে এবং ব্যাপ্তি কমিয়ে যদি একই পরিমাণ পানির প্রবাহ ঠিক রাখা যায় তাহলে নদীর পাড়ের জমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে সূত্র জানায়।
ভারতের অবস্থানঃ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ভারত তিস্তা প্রকল্পটি যাতে বাস্তবায়িত না হয় তার জন্য প্রচ- রকমের চাপ বাংলাদেশের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ভারত মনে করছে এই প্রকল্প ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হবে বলে এই প্রকল্প না করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে নিরবে বাংলাদেশকে সরাসরি চাপ দিয়ে চলেছে।
ভারতের দাবি, চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প তাদের শিলিগুড়ি করিডোরের ‘চিকেন নেকে’র খুব কাছাকাছি। ফলে এই প্রকল্পের কাজ চলাকালে কয়েক হাজার চীনা নাগরিকের অবস্থান ভারতের জন্য কোনক্রমেই শুভ হবে না। অন্য দিকে ভারত বাংলাদেশকে পরপর আশ্বাস দিচ্ছে নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের সরকার নরেন্দ্র মোদি গঠনের পর পর তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি করবে। তখন তিস্তার এই প্রকল্পের কোন প্রয়োজন হবে না। বিগত অক্টোবর’২০ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা- বাংলাদেশ সফরের সময় হয়তো আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে আবারও তৃনমূল কংগ্রেসই জয়লাভ করেছেন। এদিকে বাংলাদেশের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি’২১ ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এর এক সভায় দাবি করে বলেছেন ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে দাদাগিরি’ করে না। কিন্তু তিস্তা প্রকল্প না করতে দেয়া কি ‘দাদাগিরি’ নয়? এই ধরনের অপতৎপরতাকে আমরা কি বলতে পারি? চীনের টেকনিশিয়ান কেন ভারতের জন্য ক্ষতিকর হবে? আমাদের ভূখ-ে চীনা শ্রমিকেরা কাজ করবে, তাতে ভারতের আপত্তির কি কারণ হতে পারে? তাছাড়া শিলিগুড়ি চিকেন নেক করিডোর আমাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে অনেক দূরে। তাছাড়া কয়েকশত মাইল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চীনা কর্মীদের কিভাবে গোয়েন্দা তৎপরতা চালাবে? তিস্তা নদীর দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ভাটি থেকে যতই প্রকল্পের কাজ এগোবে ততই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে প্রকল্প এলাকার দূরত্ব বাড়তে থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এ ধরনের আবদার বরং একটি চমৎকার ‘ক্ল্যাসিক দাদাগিরি’ ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভেটো দিয়ে চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় নির্মিতব্য গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি ভেস্তে যায়। তবে ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ মহেশখালীর মাতার বাড়িতে একটি বিকল্প গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় এখন জাপানের অর্থায়নে ঐ বন্দরের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ভারত সবসময় চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে ভাল চোখে দেখে নাই। এখনও একই অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ চীন থেকে দুইটি সাবমেরিন কেনার ব্যাপারটিকেও ভাল চোখে দেখতে পারে নাই।
তিস্তা চুক্তির দশাঃ গত ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার মুখে তা আটকে যায়।
এরপর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি আশ্বস্ত করেন যে তিস্তার পান ভাগাভাগি নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হবে।
কিন্তু এরপর পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও তিস্তা সমস্যার কোন সমাধান এখনো হয়নি। সবশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মীমাংসা আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হয়নি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়া এবং দ্বিপাক্ষিক কিছু ইস্যুতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরণের হতাশা রয়েছে।