November 21, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 29th, 2024, 9:22 pm

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে, পানিবন্দি ২৫০০০ পরিবার

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী ও লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।

এদিকে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে নদী পাড়ের হাজারও মানুষ।

রবিবার সকাল ৬টায় হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে শনিবার দুপুরে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় পানিবন্দি প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। আতঙ্কিত তিস্তাপাড়ের মানুষ।

এদিকে নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোরে। আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি খেত ডুবে আছে।

একইসঙ্গে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ।

মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার রশিদুল হক বলেন, রাতে পানির গর্জনে ঘুমাতে পারিনি। সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রিজ অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এসময় বাঁধ কাঁপছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম, সলেডি স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছে। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই রাত থেকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। আমাদের গ্রাম পানিতে ডুবে আছে। নৌকা দিয়ে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির যোগাযোগ করতে হচ্ছে। ডুবে থাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।

হাতীবান্ধার পশ্চিম বিছনদই গ্রামের তমিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামে ৩০০ পরিবারের বসবাস। সবাই শুক্রবার রাত থেকে পানিবন্দি। দিন যত যাচ্ছে পানিবন্দির সংখ্যা তত বাড়ছে। বন্যার সময় শিশু বৃদ্ধ আর গবাদি পশুপাখি নিয়ে বড় বিপদে পড়তে হয়। বন্যা হলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। আমরা ত্রাণ নয়, চাই তিস্তার মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে ৩ থেকে ৩ হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দি। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুকনো খাবার এখন পর্যন্ত বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে পৌঁছে দেওয়া হবে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ৩ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি। বাঁধগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষদের নিয়ে বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রবিবার সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কিছু পরিবার পানিবন্দি। তাই তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয়, ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

——ইউএনবি