March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 12th, 2022, 7:25 pm

তীব্র খরায় বাগেরহাটে আমন উৎপাদন ব্যাহত

আমন ধান উৎপাদনে বিপর্যয় বাগেরহাটে আসন্ন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাগেরহাটে ৪৮৯ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমন মৌসুম প্রায় শেষের দিকে খরার পরিস্থিতির কারণে জেলার প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে।

পানির অভাব কৃষকদের আমনের চারা রোপণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে এবং যারা ইতোমধ্যে চারা রোপণ করেছেন তারা তাদের ফসল হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ধান চাষ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা এবং কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাতের কথা ভাবছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে মোট দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮টি কৃষক পরিবার রয়েছে। ১ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ধান রোপনের মৌসুম। বাগেরহাট জেলায় এ বছর ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত আবাদ হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে।

এছাড়া বাগেরহাটে চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত দুই হাজার ৫৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে তিন হাজার ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সে হিসাবে জেলায় ৪৮৯ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে।

বাগেরহাটের কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানকার সব ধান খেতে ফাটল ও আগাছা দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটে উদ্বিগ্ন কৃষকরা সেচের মাধ্যমে চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। জেলার সদর, শরণখোলা ও মোল্লারহাট উপজেলায়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

স্থানীয় কৃষক শেখ আসাদুর রহমান প্রতি বছর পাঁচ একর জমিতে ধান লাগান। জমিতে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে তিনি সংসার চালান। এ বছর মৌসুমের শুরুতে জমিতে প্রথমবার যে বীজপাতা তৈরি করেছিল তা বীজতলায় মারা গেছে। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে অল্প পরিমাণ জমিতে বীজপাতা তৈরি করেছে। দুইবারের চেষ্টার বীজপাতা এখন গরু-ছাগলে খাচ্ছে।

কৃষক আসাদ বলেন, শুকনো জমিতে চারা রোপণ করা যায় না। এ মৌসুমে পানির অভাবে কোনো চারা রোপন করতে পারিনি। আমন চাষের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, মানে এ বছর আমি ধান চাষ করতে পারব না। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।

বিভিন্ন দেশে কৃষি সেক্টর ঘুরে দেখা ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, নেদারল্যান্ডে শতকরা ৬০ শতাংশ পানি নদী-খালে বাষ্পীভূত হয়। কীভাবে ওই বাষ্পীভূতকে রোধ করে সেচের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নিয়ে তারা গবেষণা করছে। মাটি এবং পানি নিয়ে গবেষণা করলেও আমরা কিন্তু তা করছি না।

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাস অনেক দেশের কৃষি পদ্ধতি দেখেছেন। ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জেলায় চলমান কৃষি সঙ্কট নিরসনে কিছু ধারণা দেন।

তিনি বলেন, পানি ও মাটি নিয়ে গবেষণা করে ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সৌরশক্তি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া বর্তমান সেচ পদ্ধতিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে এবং বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে।

বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান পানি সংকট মোকাবিলায় ধান চাষে পানির পাম্প ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর জানান, ক্ষতি কমানোর জন্য, আমরা কৃষকদের বিআর-২৩ জাতের ধান চাষ করতে এবং সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। বর্তমানে জেলায় চার হাজার ৫০০ সেচযন্ত্র চালু করা হয়েছে।

তিনি জানান, চারা রোপণের সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আজিজুর বলেন, সরকার এ বছর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হারাবে কি না তা জানতে আমাদের ফসল কাটার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

—-ইউএনবি