May 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, February 8th, 2024, 9:51 pm

তীব্র গ্যাস সঙ্কটে শিল্পখাতে বাড়ছে এলপিজির ব্যবহার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তীব্র গ্যাস সঙ্কটে শিল্প-কারখানা চালু রাখতে শিল্পোদ্যোক্তারা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সংযোগ বাড়াচ্ছে। ফলে দেশে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ না থাকায় ভারী ও মাঝারি শিল্পের অন্তত পাঁচ শতাধিক কারখানা এখন এলপিজি ব্যবহার করছে। আর বর্তমানে বিভিন্ন খাতের অন্তত এক হাজারের বেশি কারখানায় এলপিজির সংযোগের কাজ চলছে। শিল্পে এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ খাতের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে শিল্প খাতে এলপিজি ব্যবহারের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ওই বৈঠকে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) শিল্প খাতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজির একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে। তাতে শিল্পে এলপিজির প্রযুক্তিগত নানা সমাধান তুলে ধরা হয়। পরে ওই বৈঠকে শিল্পে এলপিজি ব্যবহারের সমন্বিত একটি নীতিমালা তৈরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, যা নিয়ে এখন কাজ করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। জ্বালানি বিভাগ এরইমধ্যে নীতিমালার খসড়ার কাজ অনেকটা এগিয়েছে বলে জানিয়েছে। শিল্পোদ্যোক্তাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিল্পে এলপিজি ব্যবহারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এটি প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় ব্যয়বহুল। তবে ডিজেলের তুলনায় সাশ্রয়ী। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম শিল্পে ৩০ টাকা। আর এলপিজির দাম প্রতি কেজি ১১৯ টাকা ৪০ পয়সা, প্রতি লিটারের (অটোগ্যাস) দাম ৬৫ টাকা ৭৬ পয়সা। এ দাম শুধু জানুয়ারির জন্য কার্যকর। শিল্পে গ্যাসের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় নিটওয়্যার ফ্যাক্টরিতে। ওসব কারখানার বেশির ভাগ জেনারেটর গ্যাস ও ডিজেলচালিত। আর নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ পেতে খরচ বেশি হলেও এলপিজি নির্ভরযোগ্য।

দেশে শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সংকট দীর্ঘদিনের। এমন অবস্থায় অনেক কারখানাতেই অব্যবহৃত জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে এলপিজির অবকাঠামো। যেখানে মাউন্টেড বা গ্যাস স্টোরেজ ট্যাংক বসানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের বাজারে ৩০টি দেশী ও বহুজাতিক কোম্পানি এলপিজি সরবরাহে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা, ওমেরা, ফ্রেশ, যমুনা, বিএমসহ আরো কয়েকটি কোম্পানি বাজারজাতের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিল্পে এলপিজির ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে। সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন পাওয়া গেলে পাইপলাইনের গ্যাসের নির্ভরতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। শিল্পে এলপিজির জন্য দরকার প্রপার নীতিমালা, যেখানে সরকার একটা গাইডলাইন দেবে। সে অনুযায়ী বেসরকারি কোম্পানিগুলো এলপিজি মার্কেট ডেভেলপ করবে। বাসাবাড়ি থেকে গাড়িতে এ গ্যাস প্রসারিত হয়েছে। এখন শিল্পে প্রসার সময়ের দাবি।

সিরামিক, পেট্রোকেমিক্যাল, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট শিল্পে এলপিজির ব্যবহার বাড়াচ্ছে শিল্প মালিকরা। খরচ বিবেচনায় ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার বাদ দিয়ে এলপিজিতে রূপান্তর করছে অনেক কারখানা। পর্যায়ক্রমে সেটি বাড়ছে। এলপিজি খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিপুল অংকের বিনিয়োগ রয়েছে। এ খাতের যন্ত্রাংশ আমদানিতে সরকারের নীতিসহায়তা পেলে শিল্প খাতে তা প্রসারিত হবে। তাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর পর্যায়ক্রমে চাপও কমে আসবে।

সূত্র আরো জানায়, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট সরবরাহের সিংহভাগ বিদ্যুতে ব্যবহার হয়। এর বাইরে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হয় ১৩ শতাংশ এবং সিএনজি খাতে ৬ শতাংশ। শিল্প মালিকরা অবশ্য আবাসিক ও সিএনজি খাতকে এলপিজিতে রূপান্তর করে সে গ্যাস শিল্পে ও সার কারখানায় ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছে। এতে শিল্পের গ্যাস সংকট কিছুটা হলেও কমে আসবে।

এদিকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, শিল্পে এলপিজি সংযোগ দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ। এ খাতে বৃহৎ আকারে এলপিজি ব্যবহার ব্যয়বহুল। প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও অনেক। তার চেয়ে বরং আবাসিক ও সিএনজি খাতের গ্যাসকে এলপিজিতে রূপান্তর করতে পারে সরকার। এ দুই খাতের প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ১৯ শতাংশ, যা মোট দৈনিক গ্যাস সরবরাহের ৪২৯ এমএমসিএফডি। বিপুল পরিমাণ এ গ্যাস শিল্পে ও সার কারখানায় দেয়া গেলে তার অর্থনৈতিক ফিডব্যাক অনেক বেশি।

অন্যদিকে এ বিষয়েজ্বালানি বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম জানান, এলপিজির একটি নীতিমালা রয়েছে। এখন সেটি সমন্বিত নীতিমালা করা হচ্ছে। এটি নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই এ নীতিমালা প্রকাশ করা হবে।