তুরস্কের আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া ৫২ লাখ মানুষকে সাহায্য করতে এক বিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ এই আহ্বান জানায়।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী প্রায় ৫০ লাখ সিরীয়কে সাহায্যের জন্য ৩৯৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়ার দুই দিন পর এই আহ্বান জানানো হলো।
এই তহবিল তিন মাস চলবে। সাহায্য সংস্থাগুলোকে খাদ্য নিরাপত্তা, সুরক্ষা, শিক্ষা, পানি এবং আশ্রয়ের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলোতে সরকার-নেতৃত্বাধীন সহযোগিতা প্রচেষ্টাকে সমর্থনে দ্রুত তাদের ক্রিয়াকলাপ বাড়াতে সহায়তা করবে।
উভয় আবেদন দীর্ঘমেয়াদী সাহায্যের জন্য নতুন আবেদনেও অনুসরণ করা হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘তুরস্ক বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থীর আবাসস্থল এবং কয়েক বছর ধরে সিরিয়ার প্রতিবেশীদের প্রতি প্রচুর উদারতা দেখিয়েছে।’
‘এখন বিশ্বের জন্য সময় এসেছে তুর্কি জনগণকে সমর্থন করার- ঠিক যেমন তারা অন্যদের সাহায্য চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।’
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন: ‘তুরস্কের জনগণ হৃদয়ে অব্যক্ত ব্যথা সইছে। আমি এমন পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেছি যারা তাদের ধাক্কা এবং ধ্বংসের গল্পগুলো বর্ণনা করেছে। তাদের কঠিন সময়ে আমাদের অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে তারা তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবে।’
জাতিসংঘ এবং অংশীদাররা ৬ ফেব্রুয়ারিতে আঘাত হানা বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক এবং প্রতিবেশী সিরিয়াকে সাহায্য করার জন্য ছুটে আসছে।
সরকারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, শুধুমাত্র তুরস্কে ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ একবারের প্রজন্মের বিপর্যয়ে সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে। এই বিপর্যয়ে দেশটিতে ৩৫ হাজার মানুষ মারা গেছে।
তীব্র শীতের মধ্যে ভূমিকম্প আঘাত হানে। ছোট শিশু এবং বয়স্কসহ হাজার হাজার মানুষ হিমাঙ্কের তাপমাত্রায় আশ্রয়, খাবার, পানি, হিটার এবং চিকিৎসা সেবা ছাড়াই বাস করছে।
স্কুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাসহ প্রায় ৪৭ হাজার ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে, এবং শত শত শিশু এখন এতিম বা তাদের পিতামাতার সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে অক্ষম।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর অনুসারে অন্যান্য জাতীয়তার প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার মানুষসহ প্রায় ৩৬ লাখ সিরিয়ান তুরস্কে একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে।
ভূমিকম্পে প্রভাবিত ১১টি প্রদেশে এক দশমিক ৭৪ মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থী বাস করে।
জাতিসংঘ পাঁচটি প্রদেশ- আদিয়ামান, গাজিয়ান্তেপ, হাতায়, কাহরামানমারাস এবং মালাত্যা-তে হাজার হাজার অনুসন্ধান ও উদ্ধারকর্মীররা অভিযান সমন্বয় করছে। মানবিক সংস্থাগুলো সরকারের নেতৃত্বের সহায়তায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে।
এই সপ্তাহে সিরিয়ার জন্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেয়া শুরু হয়েছে। তুর্কি সীমান্তের ওপার থেকে সাহায্য বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয় উপকরণের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ ভূমিকম্পের পর অনেক বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে।
আট হাজার ৯০০টিরও বেশি ভবন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ১১ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে খাদ্য, নগদ সহায়তা এবং তীব্র শীতের আবহাওয়ায় মোকাবিলা করার সামগ্রী সরবরাহ।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২